শিব নারায়ন দাস। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রুপকার, ডিজাইনার। অবিভক্ত কুমিল্লার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে, অনাদরে-অবহেলায়, খেয়ে না খেয়ে, অসুস্থ্য হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন! তাঁর সমস্ত দায়িত্ব স্পিক আউট নামের একটি সংগঠন গ্রহণ করছে।
স্পিক আউট সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক সুপন রায়। সংগঠনটি করোনার দুর্যোগকালে হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় স্পিক আউট খোঁজ নেয় শিবু দার।
শিব নারায়ন দাস এখন খুব অসুস্থ। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এছাড়া তার সংসারে এখন আয় করার মতো কেউ নেই। এ অবস্থায় নিজের বাড়ি না থাকায় তিনি থাকেন ভাড়া বাড়িতে। সে বাসার ভাড়ার জোগাড়ও তার চিন্তার কারণ! তার ওষুধ লাগে, শ্বাস নিতে অক্সিজেন লাগে, নেবুলাইজারের পাউডার (ওষুধ) কেনা লাগে। কোথা থেকে জোগাড় হবে এসবের টাকা- সারাক্ষণ সে চিন্তায় থাকেন শিবু দা।
সুপন রায় শিবুদাকে নিয়ে লিখেছেন, ‘শিবু দা না খেয়ে মরবে আর কারো ১০ বছরে বেতন বাড়বে ৩ গুণ! আমরা কবে ভালবাসতে শিখবো আমাদের পতাকা কে? কবে সত্যিকার অর্থে ভালবাসতে পারবো প্রিয় মাতৃভুমিকে?
বাংলাদেশ কেবলই দুধেল গাই নয়, এদেশ টা কৃষকের, গরীবের, শ্রমিকের, কেবলই লুটেরাদের নয়।
শিবু দা না খেয়ে মরবে আর কারো ১০ বছরে বেতন বাড়বে ৩ গুন! এমন দেশ তৈরী করবার জন্যই কি তিনি পতাকা এঁকেছিলেন?
তাঁর কষ্ট দেখে বুকের পাঁজরটা ভেঙ্গেচুরে মুচড়ে গেছে। কত অকৃতজ্ঞ আমরা!
শিব নারায়ন দাস, আমাদের জাতীয় পতাকার রুপকার, ডিজাইনার। অবিভক্ত কুমিল্লায় তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক। তাঁর অনেক সহযোদ্ধা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে, পাজেরো হাকিয়ে, হুইসেল বাজিয়ে রাস্তায় দৌড়ান। আর তিনি জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে, অনাদরে অবহেলায়, খেয়ে না খেয়ে, অসুস্থ্ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
বুকে হাত দিয়ে বলুন, ক’ জন খোঁজ রেখেছেন তাঁর? যেই পতাকা উড়িয়ে দেশ স্বাধীন হল, সেই স্বাধীন দেশে, সেই পতাকার রুপকার না খেয়ে মরে যাবে? এর চাইতে লজ্জার, গ্লানির আর কী হতে পারে
আমরা সৌভাগ্যবান তিনি আমাদের সময় দিয়েছেন, কথা বলেছেন। প্রচন্ড অভিমানের দেয়াল ভেঙ্গে আমরা সমর্থ হয়েছি, তাঁর মন জয় করতে। তাঁর সমস্ত দায়িত্ব স্পিক আউট গ্রহণ করছে।
আমরা জাতীয় পতাকাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। আমরা জাতীয় পতাকাকে বুকে আগলে রাখতে চাই। এতোদিনের বঞ্চিত, ভালবাসাহীন জাতীয় পতাকার স্বপ্নদ্রষ্টাকে আর কষ্টে রাখতে চাই না। তাঁর চাপা কষ্ট আমাদের বুকের পাঁজর দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে।
আমরা শিশু অমিতকে বাঁচিয়েছি, পাশে দাঁড়িয়েছি সবটুকু উজাড় করে। জাতীয় পতাকা তো তারও অনেক বেশি কিছু। আমরা কি আমাদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো না?
আমরা সকলেই এই মহামারীকালে, এই মহা সংকটে, কাউকে না কাউকে সাহায্য করেছি, কারো না কারো পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এটি ভিন্ন বিষয়, এটি আমাদের চেতনা। আমাদের অস্তিত্ব। অভিমানে এমন এক স্বপ্নপুরুষ নীরবে কষ্টে, রোগে-শোকে কাবু হয়ে, না খেতে পেয়ে মরে যাবেন? এটি কি সহ্য করার মতো?
বিধাতা না করুন, আজ যদি তিনি চলেই যেতেন, নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমরা সকলে আমাদের জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে অহংকার বুকে মেখে, ওনার ছবি জুড়ে দিয়ে বড় বড় স্ট্যাটাস দিতাম। বলতাম,আপনাকে ভীষণ মিস করছি দাদা, বাংলাদেশ আপনাকে মনে রাখবে আজীবন।
কিন্তু জীবিত থাকাকালে ধুঁকে ধুঁকে মরবেন তিনি, সময় হবে না খোঁজ নেবার। খেতে না পেয়ে মরে যাবে, কেউ খাবার নিয়ে যাবো না। ওষুধ লাগবে নেবুলাইজার, ইনহেলার, সলিউশান, অক্সিজেন, আরো কত কী! কিন্তু কেউ গিয়ে বলব না, এই নিন!
তাঁকে কেন এই বয়সে বাড়ি ভাড়ার কথা নিয়ে ভাবতে হবে? কেন তাকে খাবার নিয়ে ভাবতে হবে?
তাই আসুন, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি। প্রশ্ন করি, আজ আমি আপনি এই দেশ ভোগ করছি, তাতে কি তাঁর অবদান নেই? তাকে ভালবাসতে না পারি, তাঁর নিজের হাতে তৈরি করা পতাকাকে কি ভালো না বেসে পারবো?
চলুন, আমাদের সবার অহংকার, জাতীয় পতাকাকে ভালবেসে, তাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে, মানুষটির পাশে দাঁড়াই, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিই!
আমরা সকলেই আজ সংকটে। জমানো অর্থে টান পড়েছে কবেই। তারপরও বলছি, চা সিগারেটে বাড়তি খরচ না করে, ওই টাকাটুকু দিয়েই না হয় সহযোগিতার হাতটা বাড়িয়ে দিই।
যে যা পারি, তাই নিয়ে সহায়তা করি। তা সে ১০ টাকাই হোক, অথবা ১০০ টাকা কিংবা ৫০০ টাকা, যার যা সামর্থ্য তাই দিয়ে দিই। পাশে দাঁড়াই, সম্মান জানাই।
আমাদের সবার সহায়তা ও ভালবাসা পেলে তিনি হয়তো কিছুটা হলেও আবার সুস্থ হবেন, বুঝবেন, এদেশের মানুষ তাঁকে ভুলে যায়নি। তাঁর অবদানকে অস্বীকার করেনি। তাঁকে সম্মান করেছে।
তিনি হয়তো জীবনের শেষ দিনগুলো আপনাদের সহায়তায় হাসিমুখে স্বস্তি নিয়ে কাটিয়ে যেতে পারবেন!
তাঁকে নিয়ে আমরা তৈরী করেছি, একটি বিশেষ প্রতিবেদন। নাম দিয়েছি- ‘স্টোরি আব বাংলাদেশ’ | স্পিক আউটের সঙ্গে থাকুন।’