প্রাচীনকাল থেকে যেসব খেলা এখনও টিকে আছে, তারই একটি হলো পোলো। প্রাচীনকালে সারা প্রাচ্যদেশ জুড়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে স্টিক ও বল নিয়ে খেলোয়াড়দের পোলো খেলতে দেখা যেত। আলেকজান্ডারকে একবার একটি পোলো-স্টিক উপহার দেয়া হয়েছিল। অতীতে পারস্যে এই খেলা খুব জনপ্রিয় ছিল। পারস্যের চিত্রকলায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ইস্পাহানে এখনও পাথরের যে গোলপোস্ট আছে সেটাও অতীতের বহু প্রচলিত এই খেলার সাক্ষ্য দিচ্ছে। সাধারণভাবে বলা হয়, ইরানেই পোলো খেলার উদ্ভব হয়েছে। পোলো কথাটি সম্ভবত এসেছে তিব্বতী শব্দ ‘পুলু’ থেকে। পুলু মানে বল। ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবর লিখিতভাবে প্রথম এই খেলার নিয়মগুলি প্রণয়ন করেন। পোলো খেলার সময় আঘাত পেয়েছিলেন সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক। ওই আঘাত থেকেই পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
উনিশ শতকে শিলচর জেলার কয়েকজন ইংরেজ চা-কর দেখেছিলেন পাশেই মণিপুরে ভারতীয়রা ভারী সুন্দর একটা খেলা নিয়ে মেতে আছে। সেই খেলার গতি ও সৌন্দর্য দুটোই চোখ ভরে দেখার মতো। আসামের এই চা-কররাই ১৮৫৯ সালে প্রথম ব্রিটিশ পোলো ক্লাব স্থাপন করেছিলেন। তিন বছর পর পোলো আসে কলকাতায়। ব্রিটিশ সেনারা ও ভারতীয় রাজা ও যুবরাজরা বেশ উৎসাহের সঙ্গেই খেলাটিকে গ্রহণ করেছিলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম পোলো খেলা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। ‘টেন্থ হুসার্স’ খেলেছিল রাজকীয় অশ্বারোহী বাহিনীর বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ উৎসাহীরা অচিরেই এই খেলা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনায় এই খেলা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। গোড়ার দিকে ইংরেজরা শুধু সেরা পোলো খেলোয়াড়ই ছিলেন না, পোলো খেলার উপযোগী ঘোড়াও তারা তৈরি করেছিল। ভারতের পাহাড়ি এলাকার ছোটোখাটো ঘোড়ার বিকল্প হিসেবে এগুলি পোলো খেলার মাঠে অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে ১৯১৬ সালের পর এসব ঘোড়ার বদলে আসে তাগড়াই, চটপটে সব ঘোড়া। পোলো খেলোয়াড় ও ঘোড়া দুটো ব্যাপারেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আর্জেন্টিনা খুব নাম করেছে।
১৯৩৯ সালে পোলো খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন প্রণয়ন করা হয়। পোলো খেলার মাঠ ৩০০ গজ লম্বা, ২০০ গজ চওড়া। এক-একটি গোল হওয়ার পর দুটো দলকেই প্রান্ত বদল করতে হয়। খেলার শুরুতে এবং একটি গোল হওয়ার পর দুটো দল অশ্বারোহী আম্পায়ারের মুখোমুখি দাঁড়ায়। তিনি তখন মাঠের মাঝখানে বলটি ছুঁড়ে দেন। এই খেলার নিয়ম কানুন খুবই সহজ।
দুর্দান্ত সব ঘোড়ার পিঠে চেপে তীব্রগতিতে খেলা হয় বলে এই খেলার ঝুঁকি অনেক। বিপদের আশঙ্কা কমানোর জন্যই খেলার নিয়মকানুন সহজ সরল করা হয়েছে। এই খেলায় পেনাল্টিও আছে। বিপজ্জনকভাবে কাউকে বাধা দিলে পেনাল্টি গোল দিতে পারেন আম্পায়ার।
অথবা গোল লক্ষ্য করে ফ্রি হিট দেওয়া হতে পারে। খেলোয়াড়দের এক একজনের আছে নাম্বার। ১ নং এবং ২ নং খেলোয়াড় হলেন ফরোয়ার্ড, ৩ নং খেলোয়াড় হাফ-ব্যাক এবং ৪ নং খেলোয়াড় হলেন ব্যাক। তবে জায়গা বদল করে খেলা যায়।