পেটব্যথায় অবহেলা নয়

পেটে ব্যথা হয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়া অসম্ভব; কিন্তু বলা চলে যার পেট আছে তার পেটব্যথাও আছে।

অজস্র কারণে পেটব্যথা হয়। তার মধ্যে কিছু আছে খুব সাধারণ। যেমন- গ্যাস্ট্রিক আলসার, ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি ইত্যাদি। আবার অনেকগুলো মারাত্মক। যেমন- ক্যান্সারের ব্যথা, প্যানক্রিয়াটাইটিস ইত্যাদি। এর মাঝামাঝি আছে আরও অনেক রোগ। বস্তুতপক্ষে পেটের ভিতর আছে আমাদের অনেক অঙ্গ। যেমন- লিভার, প্লিহা, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, কিডনি ব্লাডার, মহিলাদের জরায়ু, ওভারি ইত্যাদি। এর সবগুলোতেই ব্যথা হতে পারে। পেটের ব্যথার বিষয়ে বা অন্য ব্যথাতে রোগীদের ভীতি থাকলেও ডাক্তার ব্যথাকে পজিটিভভাবে নেন। কারণ ব্যথা হচ্ছে রোগের সিগনাল বা ডেঞ্জার সিগনাল। এ সিগনালে জানা যায় রোগীর কোন সমস্যা হয়েছে। ফলে মোটামুটি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা যায়। আর যদি ব্যথা না থাকত তাহলে তার সমস্যাটিও প্রাথমিক পর্যায়ে জানা যেত না, যেমন ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যথা হয় কম, ফলে যে কোনো রোগ অনেক বেশি জটিল অবস্থায় ধরা পড়ে। যাই হোক, আমরা সাধারণ কিছু পেটের ব্যথা নিয়ে আলোচনা করব, যা গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর মধ্যে আছে— গলব্লাডারের ব্যথা, লিভারের ব্যথা, এপেন্ডিক্সের ব্যথা, অন্ত্রের ব্যথা, পাকস্থলীর ব্যথা, পায়ুপথের ব্যথা, প্রস্রাবের থলি ও পথের ব্যথা এবং জরায়ু ও আশপাশের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যথা। যাই হোক, পেটের ব্যথায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনকে সবসময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। পেটে তীব্র ব্যথা হলে সাধারণত এটি সার্জিক্যাল ব্যথা। চিকিৎসকরা একে একিউট এবডোমেন বলেন। এ ধরনের ব্যথা হলে দ্রুত একজন সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই অপারেশনের প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা করাতে দেরি হলে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়ের মতো অবস্থা হয়।

আরেক ধরনের পেটব্যথা হচ্ছে ব্যথার সঙ্গে পেটে চাকাজতীয় পদার্থের অনুভূতি হতে পারে। মনে হবে পেটের কোথাও যেন চাকা বা শক্ত কোনো পদার্থ তৈরি হয়েছে। এসব চাকা স্থির থাকতে বা নড়াচড়া করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত একজন সার্জনের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কারণ এটিও কোনো ধরনের টিউমারের জন্য হতে পারে। এছাড়াও পেটব্যথার সঙ্গে মলে রক্ত, কালো মল প্রস্রাবে রক্ত ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যেমন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের নতুন কোনো পেটব্যথা শুরু হলে অবশ্যই তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। পেটব্যথার সঙ্গে অন্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যেমন- বমি, ডায়রিয়া, পেট ফুলে যাওয়া, পায়খানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, রক্ত যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ থাকলে সমস্যা জটিল বলে ধরে নিতে হবে। একটা বিষয় আমাদের মনে রাখা জরুরি যে, পেটব্যথা কোনো রোগ নয়। রোগের উপসর্গ বা সিগনাল মাত্র। এ সিগনালের সূত্র ধরে রোগ নির্ণয় করে রোগের চিকিৎসা করা জরুরি। তাই পেটব্যথা হলে বিলম্ব না করে এর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রতিকার নয় প্রতিরোধ উত্তম।

শেয়ার করুন