পুলিশকে আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার। এর মধ্যে থাকবে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, স্মল আর্মস উইথ থাই হোস্টার ও হ্যান্ডস ফ্রি কমিউনিকেশন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি জানান, অপারেশনাল গিয়ারের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের অস্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বেল্টে রক্ষিত থাকবে। হাত থাকবে পরিপূর্ণ খালি। দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন আরামদায়ক হওয়ার পাশাপাশি অপারেশনাল দক্ষতা বাড়বে।
প্রথম ধাপে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৭ হাজার সদস্য ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৩ হাজার সদস্যরা এই অপারেশনাল গিয়ার পাবেন। যা পর্যায়ক্রমে সব মেট্রোপলিটনে, জেলা পর্যায়ে এবং গ্রাম পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেও এই গিয়ার যুক্ত হবে। এ ব্যাপারে আইজিপি বলেন, ‘‘উন্নত বিশ্বে রুটিন ডিউটিতে পুলিশ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেন না। এখন থেকে আমরাও সেই বিষয়টি প্রচলন করতে চাই। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আগামীকাল থেকে এটি ব্যবহার করবে। এরপর ধাপে ধাপে সবক্ষেত্রে এটির প্রচলন করা হবে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএমপি ও সিএমপি তাদের সদস্যদের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা কোনো ধরনের অস্বস্তি ছাড়াই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আমরা চাই না ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ একহাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকুক, এক হাত অকোপাইড হয়ে থাকুক। নতুন গিয়ার সংযোজনের ফলে ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টে। কাঁধে সংযোজিত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ওয়্যারলেস ব্যবহার করতে পারবেন।’’
অপারেশনাল গিয়ার সংযোজনকে পুলিশের হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এর পাশাপাশি সফটওয়্যারগত পরিবর্তন অর্থাৎ আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। আমরা চাই পুলিশের সর্বকনিষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ পদের সদস্যদের আচরণ হবে সর্বোচ্চ অনুকরণীয়। হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন করে প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না, এজন্য সফটওয়্যারগত পরিবর্তন দরকার। মনেজগতের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দ্রুতই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’’ রুটিন ডিউটিতে পুলিশের ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়বে এবং এর সুবিধা দেশবাসী ভোগ করবে বলে আশাবাদী তিনি।
নতুন গিয়ারে যুক্ত করতে আপাতত কোনো ক্ষুদ্রাস্ত্র আমদানি করতে হয়নি। স্টকের অস্ত্র দিয়েই এগুলো প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে। রুটিন ডিউটিতে পুলিশ সদস্যরা এই অস্ত্র সঙ্গে রাখলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে লং আর্মসের ব্যবহার অব্যাহত রাখবে পুলিশ।
সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার চালু করার উদ্দেশ্য:
১। পুলিশ সদস্যদের কর্মদক্ষতা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দায়িত্ব পালনকালে হাত খালি বা হ্যান্ডস ফ্রি রাখা।
২। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রুটিন দায়িত্ব পালনকালে ভারী ও বহনে কষ্টকর লং আর্মসের পরিবর্তে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য শর্ট আর্মস ব্যবহার করা।
৩। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে অধিক ক্যাজুয়ালটি এড়াতে অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লং ব্যারেল আর্মসের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনা।
৪। পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালনকে সহজ করে কমফোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫। উপনিবেশিক উত্তরাধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা।
৬। বিশ্বের অপরাপর আধুনিক দেশের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা।
৭। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং পুলিশী সেবাকে আরও সহজসাধ্য করা।