ভারতের রাজ্যসভায় পাস হলো আলোচিত তিন তালাক বিল। এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে লোকসভায় বিলটি পাস করিয়ে নেয় ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, মঙ্গলবার সংসদের উচ্চকক্ষে ৯৯-৮৪ ভোটে বিলটি পাস হয়। এখন শুধু রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মতি পেলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। তবে সেটিও আটকাবে না বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
এই আইনে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তালাকদাতার তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
লোকসভায় পাস হয়ে বিলটি রাজ্যসভায় উঠলে সেটি পুনর্বিবেচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি ওঠে। মঙ্গলবার তা নিয়ে ভোটাভুটি শুরু হলে, বিলটি পুনর্বিবেচনার পক্ষে ভোট দেন ৮৪ জন সাংসদ। তবে সেটির বিপক্ষে মত দেন ৯৯ জন সাংসদ। ফলে বিলটি পাস হয়ে যায়।
২০১৭ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দেয়। এরপর মোদি সরকার তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করে ও তিন বছরের জেল চেয়ে বিল আনে।
কংগ্রেস ও তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, মুসলিম পুরুষদের হীন বলে প্রতিপন্ন করতে মোদি সরকার তাৎক্ষণিক তিন তালাককে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দিয়ে কারাবাসের ব্যবস্থা করছে।
বিতর্কিত এই বিলটি নিয়ে সর্বভারতীয় মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের সাংসদ আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির প্রশ্ন, “স্বামী যদি তিন তালাকের অপরাধে জেলেই চলে যান, তা হলে তিনি খোরপোষ দেবেন কীভাবে? তত দিন স্ত্রীকে কেন তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে? কেন মুসলিমদের বিয়ের কাবিননামাতেই তিন তালাকের বিরুদ্ধে শর্ত লিখিয়ে নিতে বলা হচ্ছে না?”
কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের প্রশ্ন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোথায় লেখা রয়েছে , তাৎক্ষণিক তিন তালাক বা তালাক-এ-বিদ্দতকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দিতে হবে? ২২টি মুসলিম রাষ্ট্রে তিন তালাক নিষিদ্ধ। কিন্তু কোথাও তাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা দেওয়া হয়নি। একমাত্র বাংলাদেশে তা রয়েছে। কিন্তু সেখানেও মাত্র এক বছরের জেলের আদেশ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তিন তালাকের অপরাধ নারী নির্যাতন প্রতিরোধ আইন দিয়েই ঠেকানো যেত। হিন্দু, পার্সিদের ক্ষেত্রে স্বামী তার স্ত্রীকে ছেড়ে গেলেও এই রকম শাস্তির ব্যবস্থা নেই। সেখানে দু’বছর পরে স্ত্রী শুধু বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করতে পারেন। তা হলে শুধু মুসলিমদের ক্ষেত্রে এমন আইন কেন?”
এ দিকে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, কেউ যদি ভুল করে, রাগের মাথায় তিন তালাক বলে ফেলেন, তা হলে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আপস করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু অনড় থাকলে তাকে জেলে যেতে হবে। ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক করবেন।