দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু নির্মূলে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাজে ব্যবহারের জন্যে এপিডেমিওলজিক্যাল ম্যাপ (রোগতাত্ত্বিক মানচিত্র) তৈরি করতে চান বাংলাদেশের বিজ্ঞানী সাইদুর রহমান চৌধুরী।
ডেঙ্গুর মতো ভেক্টরবাহিত রোগের ক্ষেত্রে রোগের বিস্তৃতি ও কোন কোন অঞ্চল কতটা উপদ্রুত তা নির্ণয়ে উন্নত বিশ্বে সবসময়ই এ জাতীয় মানচিত্র করা হয়ে থাকে। রোগের প্রাদুর্ভাবের সঠিক এলাকা চিহ্নিত করা গেলে ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ সহজ, দ্রুত ও অল্প খরচে করা সম্ভব হয়। বাংলাদেশের মতো কম লোকবল ও বাজেটের দেশে এটি আরো বেশি জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
ক্রাউড সোর্সিং বা হাসপাতালের রোগীর তথ্য বা উভয় সূত্র থেকে এই মানচিত্র তৈরী করা হলে দেশের ও নগরীসমূহের মধ্যে ডেঙ্গুর হটস্পট বা প্রধান প্রাদুর্ভাব এলাকাগুলো আলাদাভাবে শনাক্ত করা যাবে। সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সেইসব প্রাদুর্ভাব এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতা এবং মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে পারবে।
মানচিত্র তৈরি করার জন্যে তাঁর দরকার হবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ডেঙ্গু রোগীদের রোগ সংক্রমণের ঠিকানা। সেক্ষেত্রে নিজস্ব কোনো মাঠকর্মী না থাকায়, হাসপাতালগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নাগরিকদের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।
৭ আগষ্ট ফেইসবুকের একটি পোস্টে সাইদুর জানান, ‘এটি খুবই সম্ভব এবং যৌক্তিক যে সমগ্র ঢাকা (ও চট্টগ্রাম) নগরীর সর্বত্র ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সমান নয় – কিছু কিছু হটস্পট থাকতে বাধ্য। অথচ সেসব হটস্পট চিহ্নিত করার কোন দৃশ্যমান রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ আমরা দেখছি না – সারা শহরে ঝাড়ু পেটা করে কোন লাভ নেই – ডেঙ্গু উপদ্রুত ওয়ার্ড ও আবাসিক অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করতে হবে, সেই অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তাহলেই দ্রুততম সময়ে ও সবচেয়ে কম খরচে এই মহামারী থেকে গণমানুষের জীবনকে রক্ষা করা যাবে।’
পরিচিতজনদের কাছ থেকে ডেঙ্গু রোগীদের সংক্রমণের ঠিকানা জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একজন প্রফেশানাল জিওগ্রাফিক ড্যাটা অ্যানালিস্ট ও ম্যাপমেকার। যদি ফেসবুকে সবাই জানা শোনা রোগিদের রোগ সংক্রমনের আনুমানিক ঠিকানা সরবরাহ করেন, আমি একটি ব্যবহারযোগ্য ডেঙ্গু হটস্পট ম্যাপ বানিয়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। পোস্টটি শেয়ার করে এবং পরিচিত রোগির রোগ সংক্রমনের স্থান জানিয়ে উদ্যোগটিকে সফল করতে সাহায্য করতে পারেন আপনিও।’
সাইদুর চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি ঢাকায় ডেঙ্গুর উপর ২০১১ সালে পরিচালিত আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণকারী একজন গবেষক। তিনি মূলত জিওগ্রাফিক ড্যাটা অ্যানালাইসিস করেন, ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে তাঁর ভৌগোলিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত দক্ষতা রোগ নির্মূলে একটি হাতিয়ার হতে পারে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।