আমাদের শরীরে এক জায়গয়া বসে থাকার জন্য তৈরি হয়নি। সে সব সময় সচল থাকবে এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু এমনটা না করে আমরা কাজের জন্য হলেও বহুক্ষণ একভাবে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকি। ফলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বিগড়ে যেতে শুরু করে। ফলে একে একে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে একাধিক মারণ রোগ।
প্রসঙ্গত, একাধিক কেস স্ট্যাডি করে দেখা গেছে কেউ যদি দিনে মোট ১০ ঘণ্টা বসে থাকেন, তাহলে শরীরের যা ক্ষতি হয় তা ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করেও মেটানো যায় না। কিন্তু আজকালকার দিনে যে বেশিরভাগ মানুষকেই বসে কাজ করতে হয়। তাহলে কি তারা চাকরি ছেড়ে বাড়ি বসে থাকবেন? একদমই না। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন। টানা বসে কাজ করবেন না। ২-৩ ঘন্টা কাজ করার পর কম করে ১০ মিনিট হেঁটে আসবেন। এমনটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর করতে থাকলেই দেখবেন আর কোনও সমস্যা হবে না। আর যদি এমনটা করতে না পারেন তাহলেই দেখা দেবে জটিল সব রোগ। যেমন…
১. হার্ট:
বসে থাকার সময় আমাদের শরীরে রক্তচলাচল খুব কমে যায়। ফলে দেহে জমে থাকা ফ্যাটের গলন কম পরিমাণে হতে থাকে। এতে ফ্যাটি অ্যাসিডের কারণে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে যারা দিনে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে কাজ করেন, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা, যারা ৫ ঘণ্টার কম সময় বসে থাকেন, তাদের থেকে বেশি হয়। এর থেকে একটা কথাই প্রমাণ হয়ে যায় যে, বসে থাকা মানেই হার্টের ক্ষতি কিন্তু!
২. প্যানক্রিয়াস:
মাত্র একদিন বেশি সময় বসে থাকলেই ইনসুলিন ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। তাহলে ভাবুন দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে শরীরের কতটা ক্ষতি হয়। প্রসঙ্গত, একথা তো সকলেই জানেন যে ইনসুলিন যখন ঠিক মতো কাজ করতে পারে না, তখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই তো বসে কাজ করলে এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। সম্প্রতি ডায়াবেটিলোজিয়াতে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে যারা দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি সময় বসে কাজ করেন, তাদের ৯০ শতাংশেরই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. কোলোন ক্যান্সার:
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কোলোন, ব্রেস্ট এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। আসলে বেশি সময় বসে থাকলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় কোষেদের জন্মহারও। ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এখানেই শেয নয়, দেহ সচল না থাকলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা কমে যায়। সেই কারণেও কিন্তু ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই মারণ রোগকে আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. বদ হজম:
খাওয়ার পর পরই যদি বসে পরেন, তাহলে খাবার ঠিক মতো হজম হতে পারে না। ফলে বদ হজম এবং গ্যাস-অম্বল সহ একাধিক পেটের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
৫. মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়:
বহুক্ষণ বসে কাজ করলে ব্রেন ফাংশনও ধিমে তালে হতে থাকে। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কে কম পরিমাণ অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছানোর কারণে ব্রেন পাওয়ারও কমতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তি উভয়ই কমে যায়।
৬. ঘাড়ে এবং কাঁধে যন্ত্রণা:
কম্পিউটারে কাজ করার সময় আমরা একটু সামনের দিকে ঝুঁকে যাই। ফলে শরীরের উপরিঅংশ, বিশেষত ঘাড় এবং কাঁধ, শরীরের নিচের অংশের থেকে এগিয়ে যায়। এমন পসচারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে সেরিব্রাল ভাটিব্রার উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে ঘাড়ে এবং কাঁধে যন্ত্রণা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
৭. পিঠে ব্যথা:
বসে থাকার সময় শিরদাঁড়ার উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে পিঠে ব্যথা হওয়ার মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে পিঠে ব্যথার কারণে যারা কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশেরই দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার অভ্যাস রয়েছে। কী কী নিয়ম মানলে বসে কাজ করলেও কোনও রোগ হবে না? এক্ষেত্রে কতগুলি নিয়ম মেনে চললে দারুন উপকার পেতে পারেন। যেমন-
১. কাজের ফাঁক মাঝে মধ্যেই একটু হেঁটে নিন। একভাবে ২-৩ ঘণ্টার বেশি কাজ করা চলবে না।
২. লিফ্টের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৩. প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটার চেষ্টা করুন।
৪. রিভলভিং চেয়ারের পরিবর্তে কাঠের চেয়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এমনটা করলে শরীরের ক্ষতি কম হয়।
৫. শরীরকে সার্বিকভাবে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করুন।