জাপানে জন্মহার যেভাবে কমছে তা ঠেকাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তির পেছনে অর্থ ঢালবে সরকার। লোকজন যাতে তাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে বের করতে পারে, সেজন্যে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে কাজে লাগানো হবে। জাপানে যেসব স্থানীয় সরকার ইতোমধ্যে এরকম প্রকল্প চালাচ্ছে বা শুরু করতে যাচ্ছে, সরকার সামনের বছর থেকে সেগুলোকে সহায়তা দেবে।
২০১৯ সালে জাপানে জন্ম নিয়েছিল মাত্র ৮ লাখ ৬৫৪ হাজার শিশু। এটি নিম্ন জন্মহারের ক্ষেত্রে এক নতুন রেকর্ড। বিশ্বে যেসব দেশে জন্মহার সবচেয়ে কম, জাপান তার অন্যতম। সেখানে জন্মহার কমছে বহু বছর ধরে, ফলে জাপান মূলত প্রবীণদের দেশে পরিণত হয়েছে। এই ধারা পাল্টানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে অনেক বছর ধরে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ সেরকম একটি পদক্ষেপ। সামনের বছর জাপানের কেন্দ্রীয় সরকার এজন্যে স্থানীয় সরকারগুলোর জন্য দুই বিলিয়ন ইয়েন বা ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে।
জাপানে অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ম্যাচ-মেকিং বা ঘটকালি সেবা দিয়ে থাকে। কোনও কোনও এলাকার কর্তৃপক্ষ এজন্যে এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করছে। যারা জীবনসঙ্গী খুঁজছেন তাদের যে ফর্মটি পূরণ করতে হয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে সেটি বিশ্লেষণ করে এই কাজ অনেক ভালোভাবে করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন যেসব ব্যবস্থা চালু আছে, সেগুলোর ঘটকালি দক্ষতা খুব সীমিত। সম্ভাব্য পাত্র-পাত্রী খোঁজার সময় এখানে কেবল বয়স বা আয়ের সীমাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। একেবারে যেরকম সঙ্গী কেউ খুঁজছেন, কেবল সেরকম কেউ থাকলেই তাকে সার্চ রেজাল্টে খুঁজে পাওয়া যায়।
জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, সরকারের এই তহবিল যোগানো হবে আরও উন্নত প্রযুক্তি তৈরির জন্য। যেখানে পাত্র-পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্রে কারও শখ ও মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলোকেও বিবেচনায় নেওয়া যাবে। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, “যেসব স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটকালির সেবা চালু করেছে বা করতে যাচ্ছে, আমরা বিশেষ করে তাদেরকেই সাহায্য দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আমরা আশা করছি এরকম সহায়তার মাধ্যমে আমরা জাপানের জন্মহার কমার বর্তমান ধারাটি উল্টে দিতে পারবো।”
২০১৭ সালে জাপানের জনসংখ্যা যেখানে ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ, সেখান থেকে এই শতকের শেষে তা ৫ কোটি ৩০ লাখে নেমে আসবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
জাপানের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও চিকিৎসা নৃতত্ত্ববিদ সাচিকো হরিগুচি মনে করেন, “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে টাকা জোগানোর চেয়ে অনেক ভালো উপায় সরকারের সামনে আছে জন্ম হার বাড়ানোর জন্য। যেমন নিম্ন আয়ের তরুণ-তরুণীদের সহায়তা দেওয়া।” এক্ষেত্রে তিনি সাম্প্রতিক এক গবেষণার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এতে বলা হচ্ছে, জাপানে প্রাপ্তবয়স্ক তরুণদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্কের ব্যাপারে অনাগ্রহ এবং তাদের নিম্ন আয়ের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে।
জাপানে কর্মরত মায়েদের কোনরকম সহায়তা দেওয়া হয় না, বিশ্লেষকরা বহুদিন ধরে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। জাপানে আশা করা হয় একজন নারী তার চাকুরির পাশাপাশি ঘরের সব কাজকর্ম সামলাবেন এবং শিশুদের বড় করবেন। সরকার বলছে, তারা জাপানে মেয়েরা যাতে আরও বেশি সংখ্যায় পূর্ণকালীন চাকুরিতে আসে, সেটিকে উৎসাহিত করতে চায়। তবে, সাম্প্রতিককালে জাপানে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য আরও বেড়েছে।
ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, লিঙ্গ সমতার দিক থেকে বিশ্বের ১৫৩টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২১। আগের বছরের তুলনায় জাপানের অবস্থান আরও ১১ ধাপ নিচে নেমে গেছে।