সন্তান জন্মের পর প্রত্যেক বাবা-মা’ই চান তার একটি সুন্দর নাম রাখতে। এ জন্য কেউ শরণাপন্ন হন কবি-সাহিত্যিকদের, কেউবা খোঁজেন অভিধান। আবার অনেকেই পরিবারের গুরুজনের দেওয়া নামটাই রেখে দেন সন্তানের জন্য।
তবে এ সব পদ্ধতির ধার ধারেননি ভারতের মহারাষ্ট্রের গোন্ডিয়া জেলার দম্পতি মিঠুন ও মানসী বাং। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য, সন্তানের নাম রাখতে ভোটাভুটির আয়োজন করেছেন তারা। কারণ ঠিকুজিতে দেখা গেছে, তাদের ছেলে বড় হয়ে নেতা হবে।
পেশায় কাপড় ব্যবসায়ী মিঠুন বলেন, ছেলের জন্মের পর আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে তার জন্মকুন্ডলি তৈরি করা হয়। শ্বশুর ঠিকুজি দেখে জানান, আমার ছেলে একদিন নেতা হবে বা সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হবে। কিন্তু সেই ছেলের নাম কী রাখা হবে, তা নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী অনেক ভেবেও কুল কিনারা করতে পারছিলাম না। আমার বড়ভাই আর তার স্ত্রী বলেছিলেন ইয়ক্শ নামটা রাখা যেতে পারে। বোনেরা নাম দিতে চেয়েছিল ইয়োভিক। অন্যদিকে বোনদের ছেলেমেয়েরা জানিয়েছিল ইয়ুভান নামটা ভাল।
তিনি জানান, এই তিনটি নামের মধ্যে কোন নামটি বেছে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কেউই। তখনই ভোটাভুটির আয়োজনের পরিকল্পনা মাথায় আসে। এরপর যেমন ভাবনা তেমন কাজ। সামাজিক কাজকর্মে জড়িত থাকার সুবাদে আর আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে একজন প্রাক্তন সংসদ সদস্য থাকায় কীভাবে ভোটের আয়োজন করতে হয় সেটা তার কিছুটা জানাই ছিল।
মিঠুন বলেন, আমাদের জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছুটা সুসম্পর্ক আছে। তাই তাদের কাছে একটা ইলেক্ট্রনিক ভোট যন্ত্র চেয়েছিলাম। তারা দিতেনও হয়তো, কিন্তু আমার কয়েকজন বন্ধু বারণ করল। তারা বলল, ‘ওটা নির্বাচন কমিশনের সম্পত্তি। সেটা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়।’ তখন ব্যালট পেপার ছাপা হল। নির্বাচন কমিশনের আদলে ‘শিশুর নাম নির্বাচন কমিশন’ বানানো হল। আমাদের এক আত্মীয় আর একজন শিক্ষক এই কমিশনের সদস্য হলেন।
তিনি জানান, গত ১৫ জুন ছিল ভোটের দিন। তার আগেই সব ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ব্যালট পেপার ছাপার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল ব্যালট বাক্সও। ভোট দেওয়ার জন্য ঘেরা জায়গা, তিনটি নামের প্রস্তাব যারা দিয়েছিলেন, তাদের নামে হোর্ডিং – সবই ছিল একেবারে আসল নির্বাচনের মতো।
এই নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালানো হয়েছে জানিয়ে মিঠুন বলেন, আমি নিজে কয়েকটা হোর্ডিং লাগিয়েছিলাম অনুষ্ঠানের জায়গায়। আর যারা যে নাম পছন্দ করেছিল, তারা হোয়াটস্অ্যাপে নিজেদের ডিসপ্লে পিকচারটা প্রচারের জন্য বদলে ফেলেছিল। যেমন আমার বড়ভাই আর ভাবি লিখেছিলেন ‘ভোট ফর ইয়ক্শ’। বোনেদের ছেলেমেয়েরা দিয়েছিল ‘ভোট ফর ইয়ুভান’। আর আমরা যেহেতু নামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না, তাই আমি আর আমার স্ত্রী ডিসপ্লে পিকচার বানিয়েছিলাম চিন্তিত মুখের একটা ছবি।ভোটের আগের দিন সব অতিথিদের অনুরোধ করা হয়েছিল ভোট দেওয়ার জন্য – যেমন করে থাকে নির্বাচন কমিশন। সন্ধ্যায় সবাই আসার পরে যখন ঘোষণা করা হল ভোট দেওয়া শুরু হচ্ছে, তখন মঞ্চে লাইন লেগে গিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, অতিথিদের মধ্যে এলাকার প্রাক্তন সংসদ সদস্যও ছিলেন। তার অন্য জায়গায় যাওয়ার তাড়া ছিল। তাই ঘণ্টা দেড়েক পরে ভোট নেওয়া বন্ধ করতে হয়। ৭০০ জনের মধ্যে ততক্ষণে প্রায় ২০০ জন ভোট দিয়ে দিয়েছেন। তারপরে ভোট গণনা শুরু হয়। আর চূড়ান্ত ফল ঘোষণাটাও নাটকীয় হয়েছিল। তিনটে পর্দা ধীরে ধীরে উঠে যায়, শেষেরটায় লেখা ছিল নির্বাচিত নামটা। পর্দাটা তুলে ভোটের চূড়ান্ত ফল জানিয়েছেন নানা পাটোলে, যিনি বিজেপির সংসদ সদস্য ছিলেন; এখন কংগ্রেসের রাজ্য নেতা।
মিঠুন বলেন, ভোটে আমার বোনেদের ছেলেমেয়েদের দেওয়া ইয়ুভান নামটাই জিতে যায়। এটা ভগবান শিবের আরেকটা নাম। ওরা খুব মজা পেয়েছে ফল ঘোষণার পরে। যে দুটো নাম ভোট জিততে পারেনি, তাদেরও মঞ্চে ডাকা হয়েছিল। ভাবি তো গেলই না, বড় ভাই লজ্জা পাওয়া মুখে মঞ্চে উঠল।
এই দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। তার নাম ভূমি। তার নামকরণে অবশ্য এরকম ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়নি। তবে তা নিয়ে মোটেই মন খারাপ নেই ভূমির। কারণ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে এখন যে নিজের বাবা-মা আর ছোট্ট ভাইয়ের ছবি দেখানো হচ্ছে, তাতেই সে খুব খুশি।