কোভিড করোনা’র আগে কি কোন ভাইরাস এই পৃথিবীতে ছিলনা? অবশ্যই ছিলো। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মধ্যেই আমাদের বসবাস। যেকোনো সর্দিকাশি হলেই শরীর ম্যাজম্যাজ করা, শরীর গরম হওয়া, গলা খুসখুস করা, হাঁচি, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি লক্ষণের মাধ্যমে ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার সাথে আমাদের সবারই কম বেশী পরিচয় আছে।
খেয়াল করলেই দেখবেন যারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল তারা তুলনামূলক সহজেই এসব রোগে আক্রান্ত হয় ও কাবু হয়। এরকম হওয়া মানেই কিন্তু করোনা নয়। আর কোভিডসহ এরকম হাজারো ভাইরাসের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করার খুব স্বাভাবিক এবং সহজ কিছু নিয়ম আছে যা মেনে চললে যেকোনো বয়সী মানুষ সুস্থ থাকতে পারে।
শারীরিক সুস্থতার প্রধান নিয়ামক হচ্ছে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখা এবং এর কার্যকারিতা বাড়ানো। করোনা থেকে মুক্ত খাকার জন্য সরকারী নির্দেশে আমরা এখন বাড়িতে আছি সবাই। এ সময়টাতে অনেকেই অনেক নানারকম মুখরোচক খাবার রান্নাবান্না করে পিকনিক করছি। কিন্তু মনে রাখা উচিত আমরা কেন গৃহবন্দি। আর সেজন্য আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি এখন এবং ভবিষ্যতের সবরকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা এরকম যেকোনো কিছুর ক্ষতি থেকে নিজের শরীরকে তৈরি করার বিষয়ে।
করোনাসহ বিভিন্ন ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকার জন্য সামান্য নিয়ম মেনে চলাই যথেষ্ট। যেমন ধরুন নিয়মিত কালোজিরা ও এর তেল খাওয়া। অনেকেই বলছে কোভিড-১৯ এর মহৌষধ হচ্ছে কালোজিরা। কালোজিরা সরাসরি করোনার চিকিৎসার ওষুধ না হলেও নিয়মিত কালোজিরা সেবনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে যেকোনো প্রকার ভাইরাল এটাক থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোন একটা বিশেষ খাবার সেবনেই শুধু বাড়েনা। এরকম অনেক কিছুর সমন্বয়ে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কাজেই করোনা কালীন জীবনে শুধুমাত্র শুয়ে বসে আর খেয়ে নয়, একটা ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করুন।
১। শরীরচর্চা- হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের শরীরচর্চা যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বেশিরভাগ সময় শুয়ে বসে না থেকে গৃহস্থালি কাজকর্ম করা, শরীরকে সচল রাখা, হাঁটা, হাত পা নাড়ানো, স্ট্রেচিং, হালকা উঠবস করা – এ ধরনের শরীরচর্চা এ সময়টাতে বাড়িতে থেকে করা সম্ভব। এবং এই চর্চা আপনার শরীরের অভ্যন্তরে কাজ করা শুরু করে দিবে। তাই প্রতিদিন অন্তত ত্রিশ মিনিট শরীরচর্চা করুন।
২। বিশ্রাম- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। রাতে চেষ্টা করুন একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে এবং পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে
ভোরবেলা উঠতে। প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য
অন্যতম সহায়ক উপাদান।
৩। প্রোটিন ডায়েট- করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই শুকনা খাবার কিনে বাড়ি ভরে ফেলেছেন যেগুলোর প্রায় সবই শর্করা জাতীয় খাবার। খাবারের তালিকায় প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। শর্করার পরিমাণ কমিয়ে ডিম, ডাল, মাছ, দই, পনির, দুধ ইত্যাদি খাবার আপনার প্রয়োজনমত খান।
৪। ভিটামিন- ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার সেবনের পাশাপাশি বিভিন্নরকম মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেকোনো ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাই এইদিকে নজর দিন। ভিটামিন সি এর জন্য কমলা মাল্টাই খাওয়া লাগবে তা নয়। নিজের গাছ থেকে পেড়ে লেবু, পেয়ারা, বরই খান। কাঁচা আম, আমলকি, কাঁচা মরিচ এ রকম সহজলভ্য খাবার থেকেই পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব। ভিটামিন ডি এর জন্য রোদে গিয়ে ১৫ মিনিট দাঁড়ান। অন্যান্য ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
৫। প্রচুর পানি পান- প্রচুর পানি পানের কোন বিকল্প নেই। একেতো গরমকাল তার উপর সর্দিকাশির উপদ্রব। শরীর থেকে সবরকম জীবাণু ফ্লাশ আউট করে দিন প্রচুর পানি পান করে। সেই সাথে যদি কুসুম গরম পানি পানের অভ্যাস তৈরি করতে পারেন তো সবচে’ ভাল। মনে রাখবেন, ঠাণ্ডা পানি একেবারেই না। সকালে দিন শুরু করুন কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে সেই পানি পান করে। মধু না থাকলে চিন্তা নেই। লেবু মিশাতে পারেন কিংবা শুধুই কুসুম গরম পানি।
৬। খোলা আলো বাতাসে হাঁটাহাঁটি- নিঃশ্বাস নিন ফুসফুস ভরে। ঘরে আলো বাতাসের ব্যবস্থা বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকলে সবচে ভাল। আর তা না হলেও অসুবিধা নেই। ছাদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসুন। আর যারা গ্রামে আছেন তাঁদের জন্য তো আরও সুবিধা। খোলা আলো বাতাসে সময় কাটালে ফুসফুস ভাল থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সুস্থ থাকার জন্য উপরিল্লিখিত বিষয় গুলো মেনে চলা নিতান্তই সহজ কাজ। এই পথে জীবন কাটালে অসুখ বিসুখ সারাবছরই দূরে থাকবে কেননা এই পথ আপনার শরীরকে তৈরি করবে অসুখের সাথে লড়াই করার জন্য। আর বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এসবের পাশাপাশি শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে চলা, যত সম্ভব বাড়িতে অবস্থান করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, এগুলো তো মেনে চলতেই হবে। এই মাত্র কয়েকটি সহজ পথ অনুসরণ করেই যদি সুস্থ এবং দুশচিন্তাহীন জীবন কাটানো যায় তো মন্দ কী!