বেশ কিছু কারণে ইটালিতে করোনায় মৃত্যুহার যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি। নাগরিকদের বর্ধিত গড়ায়ু এবং দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন এর অন্যতম কারণ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইটালিতে মানুষের গড় বয়স ৪০ বছর, যার ২৩ ভাগ ৬৫ এর ওপরে, করোনাতে মোট মৃত্যু ২৩৫৭৬ জন। যার শতকরা ৮৩ ভাগ ৭০ ও এর ওপরে। আমাদের দেশে গড় বয়স ২৭ বছর, এখন পর্যন্ত মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশি (১৬%) ৬৫ থেকে ৭৪ বছর এর মধ্যে।
ইটালির পারিবারিক বন্ধন অনেকটা আমাদের দেশের মতো (যা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বিরল) পরিবারের সব সদস্য মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করে। ফলে পরিবারের উপসর্গবিহীন ছোট সদস্য দিয়ে সহজেই সংক্রমিত হন বয়ঃজেষ্ঠ্য সদস্যবৃন্দ। যদি বৃদ্ধ মানুষটি পূর্ব থেকেই অনিয়ন্ত্রিত প্রেশার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনির রোগী হয় তাহলে সংক্রমণ আরও সহজতর হয়।
যেসব কারণে বয়স্ক মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন-
১. বুকের/পাঁজরের হাড়, মাংস ও স্নায়ুর কার্যক্ষমতা ৬৫ বছরের পর হ্রাস পায়, ফুসফুসের পরিশোধন ক্ষমতা দুর্বল হয়
২. অনেকে এক বা ততোধিক রোগে ভোগেন
৩. দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
৪. অপ্রতুল কার্যকর টিকার ব্যবহার
৫. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, ভুলে যাওয়া রোগ, মনস্তাত্ত্বিক রোগের আবির্ভাব
৬. হৎপিণ্ড, চোখ, মাংশপেশি ও কিডনির কার্যক্ষমতা পর্যায়ক্রমে কমে যাওয়া।
বয়স্ক আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে ধরণের উপসর্গ লক্ষ করা যায়-
১. হালকা জ্বর, শুকনো কাশি এবং শ্বাসকষ্ট করোনার সাধারণ উপসর্গ। এছাড়াও বয়স্কদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় আরও কিছু উপসর্গ রয়েছে।
২. হঠাৎ আচরণগত পরিবর্তন, খাওয়া বন্ধ/বেশি ঘুম, নিস্তেজ, অবসাদগ্রস্ত, অকারণেই চঞ্চল হয়ে উঠা। উদাসীন, হতবিহ্বল, অমনোযোগী, দিকশূন্য অবস্থা তৈরি হওয়া।
৩. রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং ভারসাম্যহীন হয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া।
৪. হাল্কা শীত অনুভূত হওয়া, একটু পরপর শীতে গা কাঁপা, মাংসপেশির বেদনা, গলাতে বেদনা, হঠাৎ ঘ্রাণশক্তি/জিহ্বার স্বাদ হ্রাস পাওয়া, মাথাব্যথা করা।
৫. ডায়রিয়া, বমি ও পেটব্যথা।
পরিচর্যাকারী ঘরে/কেয়ারহোমে যে নিয়মগুলো পালন করবেন-
১. বাসায় প্রয়োজনে নিজ ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করুন, নির্দিষ্ট দূরত্ব (কমপক্ষে ৬ ফুট) বজায় রেখে সেবা প্রদান করুন। ঘরের ভেন্টিলেশন ঠিক রাখুন। কেয়ারহোমে একটি আলাদা রুমের ব্যবস্থা না হলে, রেসপিরেটরি সমস্যার রোগীদের অন্যদের থেকে আলাদা রাখুন, বিছানা কমপক্ষে ২ মিটার ব্যবধানে রাখুন।
২. নির্দিষ্ট ব্যক্তি সেবা প্রদান করুন। পরিচর্যাকালীন সময়ে সবাই মাস্ক (সার্জিক্যাল হলে ভালো) পরবেন। উপসর্গ লক্ষ করলে এন৯৫ মাস্ক, গ্লভস, ফেস-আই শিল্ড, পিপিই ব্যবহার করুন।
৩. বিদেশ ভ্রমণ করে আসা/কোভিড পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি ১৪ দিনের মধ্যে বয়স্কদের পরিচর্যা থেকে বিরত থাকুন।
৪. পরিচর্যাকারী ব্যক্তি জ্বর অথবা শ্বাস-নালিজনিত উপসর্গ বোধ করলে সেবা প্রদান হতে বিরত থাকুন। সেবাদানকারীর স্ক্রিনিং পরীক্ষা করে রাখা উত্তম।
৫. বিশ সেকেন্ডে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করুন। আপনার সংস্পর্শে আসা জায়গাগুলো স্যানিটাইজার (৬০% এলকোহল যুক্ত) দিয়ে পরিষ্কার করুন। হাঁচি ও কাশি দেয়ার সময় কনুই/টিস্যু ব্যবহার, ব্যবহৃত টিস্যু নির্দিষ্ট কনটেইনারে ফেলা ইত্যাদি নিয়মগুলো শেখান।
৬. বাথরুম ও মেঝে নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। সর্বদা ব্যবহার করা কাপড় হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৭. স্বাস্থ্য সচেতন খাবার পরিবেশন করুন। নন-পেরিসেবল ড্রাইড/ক্যানড পুষ্টিকর খাবার, দেশি ফল সঙ্গে রাখবেন।
৮. সর্বদা ব্যবহার করা ওষুধ ব্যবহারে-লোকাল ফার্মেসির হোম ডেলিভারির সাহায্য নিন।
৯. চিকিৎসার জন্য সরাসরি চেম্বারে না গিয়ে, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনে টেলি-মেডিসিনের ব্যবস্থা করুন।
১০. আপনজনরা সরাসরি দেখা না করে ক্ষেত্র বিশেষে দিনে একবার ভাইবার, ইমো, জুম ইত্যাদি দিয়ে মেসেজ ও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
১১. বাসা/হোমে অবস্থান নিশ্চিত করুন, বাইরে হাঁটার অভ্যাস পরিত্যাগ করে ঘরে হালকা যোগ ব্যায়াম বা ইয়োগা করতে উৎসাহিত করুন।
১২. বয়স্ক মানুষটিকে শপিংমলে/স্টোরে যাওয়া থেকে বিরত রাখুন, দূরে থাকলে দরজার সামনে শপিং রেখে ফোনে জানিয়ে দিন।
১৩. এ সময় রোগী মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকবে, বড় ধরনের মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে, হেড টু হেড ওয়েবের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিন।
১৪. বৃদ্ধ ব্যক্তিটিকে হঠাৎ হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিবহন/জরুরি ফোন নং হাতের নাগালে রাখুন।
১৫. খুব বেশি দরকার না হলে বাসা/হোম কেয়ারে নাপিত/ স্বাস্থ্যকর্মীর ভিজিট পরিত্যাগ করুন।
১৬. সর্বোপরি ৬৫ বছরের ওপরে প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির তিন বছর অন্তর নিউমোনিয়া ও প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা প্রদান নিশ্চিত করুন।