কফের সঙ্গে রক্ত দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। কাশতে কাশতে রক্ত যাওয়া মানেই যক্ষ্মা—ধারণাটি কিন্তু ঠিক নয়। যদিও আমাদের দেশে যক্ষ্মার হার অনেক বেশি এবং কফের সঙ্গে রক্ত গেলে যক্ষ্মা পরীক্ষা করা জরুরি। তবু ভুলে গেলে চলবে না যে যক্ষ্মা ছাড়াও এ সমস্যার আরও নানা কারণ থাকতে পারে।
দীর্ঘদিনের কাশি, প্রচুর কফ নিঃসরণ, সঙ্গে রক্তপাত, যক্ষ্মা বা ফুসফুসে প্রদাহের পুরোনো ইতিহাস থাকলে ব্রংকিয়েকটেসিস নামের এ ধরনের রোগের কথা ভাবা হয়। সাধারণ এক্স-রের চেয়ে বুকের সিটি স্ক্যানে এ রোগ ধরা পড়ে ভালো। সাধারণ নিউমোনিয়াতেও কিন্তু হঠাৎ অনেক জ্বর, বুকব্যথা ও কাশির সঙ্গে মরিচা রঙের কফ হতে পারে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, দুর্গন্ধযুক্ত কাশি ও কফের সঙ্গে রক্ত যায় ফুসফুসে ফোড়া হলে। বয়স্ক ব্যক্তির কাশি, গলা বসে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্তপাত, ওজন হ্রাস জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে ফুসফুসের ক্যানসারের বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত।
ফুসফুসের রোগেই শুধু কফের সঙ্গে রক্তপাত হয়, তা নয়। নানা রকম হৃদ্রোগেও হতে পারে। যেমন: বাতজ্বরের ইতিহাস, বুক ধড়ফড়ানি ও কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে হৃদ্যন্ত্রের ভালভজনিত সমস্যায়। বুকের রক্তনালিতে হঠাৎ বাধা (পালমোনারি এম্বলিজম), শ্বাসকষ্ট ও কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। কিছু ওষুধের কারণে দেহের রক্তপাতের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের রক্তরোগ, যেমন-হিমোফিলিয়া, লিউকোমিয়া হলে যেকোনো ধরনের রক্তপাত হতে পারে।
কারণ যা-ই হোক, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সঠিক রোগের ইতিহাস ও সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। এ ধরনের উপসর্গের পেছনে লুকিয়ে থাকে নানা জটিল রোগ।
ডা. মো. আজিজুর রহমান, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ