থ্রিজি নেটওয়ার্ক কাভারেজ এখনও সারাদেশ পায়নি, ফোরজি সবে চালু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে ফাইভজির কথা। ২০২০ সালেই চালু হতে পারে পঞ্চম প্রজন্মের এই নেটওয়ার্ক। এ বিষয়ে শিগগিরই পরামর্শকদের সঙ্গে কথা বলা হবে বলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০২০ সালে সারাবিশ্ব পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করবে। ফলে আমাদেরও নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। ফাইভজিতে যেতেই হবে। দেরি করার কোনও সুযোগ নেই।’
তবে ২০২০ সালে ফাইভজিতে প্রবেশকে উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষা হিসেবেও অভিহিত করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের হবে।’ ফাইভজি প্রযুক্তি চালু হলে সব প্রযুক্তি, পণ্য ও সেবা ফাইভজি-ভিত্তিক হয়ে যাবে বলে এসব পণ্য ও সেবা নিয়ে আরও ভাবতে হবে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তি গ্রহণ করবো, দেরিও করবো না। তবে তা করতে হবে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার নিরিখে। এর মানে হলো— ফাইভজি প্রযুক্তিকে আমরা দেশের উপযোগী করে ব্যবহার করবো।’ তিনি মনে করেন, প্রযুক্তি নিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রযুক্তি আসবে, গ্রহণও করতে হবে কিন্তু তার আগে নির্ধারণ করতে হবে ওই প্রযুক্তি আমাদের কী কাজে লাগবে, আর্থসামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন একটি প্রযুক্তি মানানসই কি না— সে বিষয়েও প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য সময়েরও প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী জানান, ‘ফাইভজি এলে চালকবিহীন গাড়ি পাবো। কিন্তু চালকদের বেকারত্ব নিরসনে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও ভাবতে হবে। ফাইভজি এলে দূরবর্তী রোবট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কিন্তু রোবটের কারণে একটি মানুষকেও যেন কর্মহীন হয়ে পড়তে না হয়, সেদিকটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে যদি বেকারত্ব বেড়ে যায়, সেটা কোনও ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে অভিমত তার। এজন্যই তিনি প্রস্তুতি ও সময়ের কথা উল্লেখ করেন।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশ ফাইভজিতে প্রবেশ করবে। এজন্য আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
এর আগে, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত ফোরজির লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দেশে ফোরজি চালু হচ্ছে। আমরা ফাইভজিতে যাবো। নতুন প্রযুক্তি এলে তা গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন— থ্রিজিই এখনও পুরো দেশ পায়নি, এখনই ফোরজি কেন চালু করা হচ্ছে? আমি তাদেরকে বলবো— শুধু ফোরজি কেন, আমরা ফাইভজিতেও যাবো। প্রযুক্তিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, ফাইভজি হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের তারহীন নেটওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল অপারেটর এটিঅ্যান্ডটি জানিয়েছে, ২০১৮ সাল নাগাদ ফাইভজির সংজ্ঞা তৈরি হতে পারে। ২০১৯ সালে আইটিইউ ফাইভজির মান নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে। কোন প্রযুক্তিকে ফাইভজি বলা যাবে বা কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে ফাইভজি বলা যাবে বা এর গতি কেমন হবে— তা ঠিক হবে ওই সময়েই। তবে ধারণা করা যায়, ফাইভজি নেটওয়ার্ক হবে শক্তিসাশ্রয়ী, দ্রুতগতির এবং আরও বেশি স্মার্ট। পঞ্চম প্রজন্মের এই মোবাইল নেটওয়ার্ক চালুর আগে নতুন নতুন তারহীন প্রযুক্তি পণ্য বাজারে পাওয়া যাবে। দ্রুতগতির স্মার্টফোন, স্মার্ট বাড়ি, গাড়ি এবং ডিভাইসে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে বলে জানা গেছে।