ছয় দশকেরও বেশি সময় আগে কোরীয় যুদ্ধে বিচ্ছিন্ন হওয়া পরিবারগুলোর সদস্যদের পুনর্মিলনী আয়োজনে বৈঠক করেছেন উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরা।
দুই কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যরা আগামী আগস্টে মিলিত হবেন বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পর্যটন কেন্দ্র মাউন্ট কুমগাংগে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় এ আলোচনা শুরু হয়। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ও উত্তরের শীর্ষ নেতা কিম জং উনের মধ্যে হওয়া দুই দফা বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করতে এ আলোচনার পরিকল্পনা হয়। ২০১৫ সালে সর্বশেষ দুই কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন কিছু পরিবারের সদস্যদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। পিয়ংইয়ংয়ের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও পারমাণবিক পরীক্ষার সূত্র ধরে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছলে পুনর্মিলনীর আয়োজনগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে শীতকালীন অলিম্পিককে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। ওই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলের মুন-কিম শীর্ষ সম্মেলনে পুনর্মিলনীর জন্য আগস্টের একদিন দুই কোরিয়াতেই সাধারণ ছুটিরও পরিকল্পনা হয়। দুই কোরিয়ার বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২০ থেকে ২৬ আগস্ট দুই দেশের ১০০ জন করে প্রতিনিধি এ মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রেডক্রসের কাছে ৫৭ হাজার বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্য নিবন্ধন করেছে।
১৯৫০-১৯৫৩ সালের যুদ্ধের সময় বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর অনেক সদস্যের বয়স ৮০ পেরিয়ে যাওয়ায় তাদের পুনর্মিলনীকে ‘মানবিক কাজ ও মানব অধিকার’ হিসেবে দেখে আসছে দক্ষিণ কোরিয়া।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত আগের পুনর্মিলনীগুলোতে মুখোমুখি হওয়া সদস্যদের চোখে আনন্দের অশ্রু ও উচ্ছ্বাস দেখা যাওয়ার কথা জানিয়েছে রয়টার্স। বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স ও ডাক যোগাযোগ পুনরায় শুরুরও প্রস্তাব দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
হুন্দাই রিসার্চ ইন্সটিটিউট থিঙ্কট্যাঙ্ক বলছে, পুনর্মিলনী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০০০ সালের পর থেকে দুই কোরিয়ার ২৩ হাজার ৬৭৬ বিচ্ছিন্ন সদস্য ভিডিওলিংক যোগাযোগের সুযোগ নিয়েছেন।
এ বছরের মার্চ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আবেদন জানানো এক লাখ ৩১ হাজার ৫৩১ দক্ষিণ কোরীয়র ৫৬ শতাংশই মারা গেছেন বলেও জানিয়েছে তারা।
উত্তরের প্রতিনিধিদলের প্রধান ছিলেন দেশটির কমিটি ফর দ্য পিসফুল রিইউনিফিকেশন অব দ্য ফাদারল্যান্ডের উপপ্রধান পাক ইয়ং ইল। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস ও একে অপরের প্রতি বিবেচনাশীল হয়ে আলোচনায় ভালো ফল আনতে সক্রিয় প্রচেষ্টা থাকা উচিত আমাদের।
অতীতেও আমরা অংশীদার ছিলাম। এখনও আমাদের উচিত হবে নেতারা যে পথে পরিচালনা করছেন, সে পথে অগ্রসর হওয়া।’ পুনর্মিলনী নিয়ে দক্ষিণের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট পার্ক কিউং-সিও।