প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিকারী কোনো অশুভ শক্তি যাতে আর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে, এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালি, বাংলাদেশ আমাদের দেশ এবং বাংলা আমার ভাষা, বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য আমাদেরকে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে। ফলে কোনো অশুভ শক্তি যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, এ জন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫-এর শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন।
দেশে-বিদেশের সব বাঙালিকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে নববর্ষ উদ্যাপন একটি সর্বজনীন উৎসব। তিনি আরও বলেন, এই উৎসবটা ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই একাত্ম হয়ে একত্রে উদ্যাপন করে। এমনকি প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিরাও উদ্যাপন করে। আমাদের সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে, সাধারণ জনগণ—সবাই উৎসবটা উদ্যাপন করে। এমনকি আমাদের একদম গ্রাম পর্যায় পর্যন্তও এই উৎসব উদ্যাপন হয়। কারণ এখানে সবাই খুব মন খুলে একাত্ম হয়ে উদ্যাপন করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ উৎসব উদ্যাপনে যত বাধাই আসুক, বাঙালি কখনো কোনো বাধা মানে না। এ জাতি বাধা ভাঙতে জানে।
শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে। সব দেশেই নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র এই উপমহাদেশে শুধু বাংলাদেশ। কাজেই এখানে নববর্ষের উৎসব এক ভিন্নমাত্রা লাভ করে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি, বাংলায় হাসি, বাংলায় কাঁদি, বাংলায় জীবনচর্চা করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, সবাই মন খুলে একাত্ম হয়ে যাতে এ উৎসব পালন করতে পারে, সে জন্য তাঁর সরকার বৈশাখী ভাতার ব্যবস্থা করেছে। সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরে এখন এ ভাতা চালু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ দেশে অতীতে বর্ষবরণ উৎসবে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, পাকিস্তান আমালে বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ছিল। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের অনেককেও বাঙালির বর্ষবরণে বাধা প্রদান করতে দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯২ সালে আমরা ১৪০০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু সেখানে তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকার বাধা দেয়। আমরা কবি সুফিয়া কামালকে নিয়ে সেসব বাধা উপেক্ষা করে রমনা পার্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন শতাব্দীকে বরণ করি।’
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া তাঁর দল এবং ১৪-দলীয় জোটের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসেসিয়েশনের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে বাঙালি ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার মিঠাই, মোয়া, মুড়ি-মুড়কি, মুরালি, কদমা, জিলাপি প্রভৃতি দ্বারা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
সৌজন্যে: দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন।