নানা রঙের বাহারি ফুল-পাতা আর পরিকল্পিত আলোকায়ন। তার ভেতর রঙ ঝলমলে নান্দনিক কটেজ। পূর্ব-উত্তর দিকে চোখের সীমানায় দেখা যাবে পুরো খাগড়াছড়ি। সর্পিল চেঙ্গী পাড়ের খাগড়াছড়ি শহর। অনেকটা পাখির চোখে দেখার মতো হয়ে সন্ধ্যায়। মনে হবে এ যেন এক নয়া দার্জিলিং।
আর পশ্চিমে যতদূর চোখ যাবে, চোখের সীমানাজুড়ে পাহাড় আর পাহাড়। সন্ধ্যায় দেখতে পাবেন ভারতীয় সীমান্তের উচ্চ আলোর হেলোজেন বাতির মিছিল। যা সত্যিই ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য অন্য এক প্রশান্তির জায়গা। পাহাড়ের বুক বোঝাই থরে থরে পাথর। সেই সাথে সবুজ পাহাড়ের গাছ-গাছালিতে পাখির কল-কাকলি।
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অনতিদূরে সুউচ্চ আলুটিলা পাহাড় চূড়ার ‘খাস্রাং’-এ গেলে এমন সব দৃশ্যই চোখে পড়বে আপনার। এই বিনোদন কেন্দ্রে রয়েছে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
জেলায় বেসরকারি পর্যটন উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তাঁর নিজ মালিকানাধীন ১০ একর পাহাড়ি জমিতে গড়ে তুলেছেন এই রিসোর্ট। আলুটিলা পর্যটন, রহস্যময় গুহা এবং তেরাংতৈবাকলাই (রিছাং ঝর্না) সংলগ্ন হওয়ায় খ্রাসাং রিসোর্ট অবস্থানগত কারণে ইতোমধ্যেই সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
খাস্রাং রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা সহকারি লিটন ভট্টাচার্য্য রানা জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তাঁর ১০ একর জমির ওপর ব্যক্তিগত বিনিয়োগে গড়ে তুলেছেন খাস্রাং রিসোর্ট ও বিনোদন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি সুদৃশ্য কটেজ। প্রতিটিতে গড়ে ৮/১০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আছে একটি হলরুম, যেখানে ১০০ জনের সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠান করা যাবে।
রিসোর্টে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক রাখা হয়েছে। পর্যটকরা এগুলো পরে ছবি তুলতে পারবেন। পাশাপাশি তারা পরিচিত হবেন পাহাড়ি জনজীবনের সঙ্গে। পর্যটকদের রাতে থাকার জন্য তৈরি হচ্ছে একটি হোটেল।
খাস্রাং-এর আরেক কর্মী জেসমিন ত্রিপুরা কার্ত্তিক জানান, বিনোদন কেন্দ্রটি সবার জন্য উন্মুক্ত। ফলে প্রতিদিনই কয়েকশ’ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। আর পিকনিক পার্টিও পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ‘গেট টুগেদার’ তো লেগেই আছে। ভ্রমণকারীদের আগ্রহের কারণে এক মাসের মধ্যেই বাড়তি লোকবলের প্রয়োজন পড়েছে।
পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, আলুটিলায় সরকারিভাবে শীঘ্রই কেবল কার স্থাপনের কাজ শুরু হবে। এ কারণে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আরো নতুন নতুন রিসোর্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খাগড়াছড়ির রিছাং ঝর্ণা, মাইয়ুংকপাল পাহাড় ও ভাইবোন ছড়ার মায়াবিনী লেকটিকে ঘিরেও উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশ বেড়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত খাস্রাং জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো। পর্যটকদের জন্য এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ রয়েছে। যেকোন সমস্যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তার।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সহ-সভাপতি ও দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মো: কাশেম বলেন, পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে এখানকার উদ্যোক্তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় একটা সংশয় ছিলো। বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী প্রত্যাশিত ভোক্তা পাওয়া- না পাওয়ার আশংকা ছিলো। কিন্তু সংসদ সদস্যের দেখানো পথ ধরে এখন জেলায় পর্যটন খাতে বিনিয়োগের একটা চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘খাস্রাং’ ভবিষ্যতে শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে, যেহেতু এখানে তাদের বিনোদনের জন্য শিশুবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা রাখা হচ্ছে। তাছাড়া শিশুরা খেলাধুলার পাশাপাশি পাবে পাহাড় চূড়ায় সৃজিত সুইমিং পুলে সাঁতার শেখার সুযোগ।
সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এই প্রতিনিধিকে বলেছেন, ‘পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্পটের পাশাপাশি খাস্রাং রিসোর্ট আলাদা মাত্রা যোগ করবে এবং পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’