মোঃ মাহবুবুল ইসলাম ।। মাটির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে বিগত কয়েক বছর যাবৎ ৫ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস’ যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন হয়ে আসছে। এবারের “বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস–২০১৭” এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে Caring for the planet, Starts from the ground (মাটি থেকে শুরু হউক, পৃথিবীর যত্ন)। প্রতিনিয়ত আমাদের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং মাটির যথেচ্ছা ব্যাবহারের কারণে মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। তাই আমাদের মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখনই সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশের ভূ প্রকৃতির প্রায় ১২% এলাকা পাহাড়ি ভূমি দ্বারা গঠিত। পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষয়িষ্ণু পার্বত্য এলাকার ন্যায় আমাদের পার্বত্য অঞ্চলেও ভূমিক্ষয়, ভূমিধ্বস অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আর এগুলোকে ত্বরান্বিত করে অপরিকল্পিত পাহাড়ের ঢাল ব্যবস্থাপনা, ব্যাপক হারে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। পাহাড়ের ঢালে যুগ যুগ ধরে কৃষকরা জুম চাষ করে আসছে। জুম লাভজনক ফসল না হলেও জীবিকা নির্বাহের আশায় পাহাড়ি কৃষকগণ প্রত্যেক বৎসর জুম চাষ করে। এক সময় আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে জৈব বৈচিত্রের প্রচুর সমাহার ছিল, তখনও পাহাড়ে ২০–২৫ বছর পর পর জুম চাষ হতো যা পরিবেশের জন্য তত ক্ষতিকর ছিল না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে, বাড়তি লোকের অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা মেটাতে এখন একই জমিতে ৩–৪ বছর পর জুম চাষ করা হয়। ফলে প্রয়োজনীয় সময়ের অভাবে মাটিকে পুণরায় উৎপাদনক্ষম হওয়ার পূর্বেই উৎপাদনে যেতে হয়। যার ফলশ্রুতিতে ফসল উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়, পাশাপাশি এর বিরুপ প্রভাব পড়ে পার্বত্য অঞ্চলের জৈব বৈচিত্রের ওপর। ত্বরান্বিত হয় ভূমিক্ষয় এবং ভূমিধ্বস প্রক্রিয়া।
এই অঞ্চলের মৃত্তিকা প্রধানতঃ তিপাম সুরমা এবং ডুপিটিলার মাধ্যমে গঠিত অম্লীয় মাটি । যা ফসল চাষাবাদে সমস্যা জড়িত মৃত্তিকা সমূহের অন্যতম। মাটির উপরের স্তর পাতলা হওয়ায় এ অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রবণতা খুব বেশি। কৃষি প্রযুক্তি বিষয়াদি যেমন – কৃষি বনায়ন, জাবড়া প্রয়োগ, বিনা কর্ষণ, গাছের নিবিড়তা, ফসল বিন্যাস, মৃত্তিকা ক্ষয়রোধী গাছাপালার মাধ্যমে চাষাবাদ ইত্যাদির মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
এক হিসাবে দেখা গেছে যে, এক ইঞ্চি মাটি গঠিত হতে ৩০০–১০০০ বছর পর্যন্ত সময় লাগে যা অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের মাধ্যমে ২–৪ বছরে মধ্যে ক্ষয়ীভূত হয়ে যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে পাহাড়ি ঢালু ভূমির টেকসই ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য্য। টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মধ্যমে মানুষের পরিবর্তনশীল চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন যথাযথ ভাবে মৃত্তিকা,পানি, বনভূমি এবং জৈব বৈচিত্র সংরক্ষণ।
……..
মোঃ মাহবুবুল ইসলাম, বান্দরবান মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)।