আমাদের খালেক ভাই। দৃশ্যতঃ সহজ-সরল একজন মানুষ। বেশ হাবাগোবা। পঁয়ত্রিশে পৌঁছেও তার বিয়ে করা হয়নি। তিনি বিভোর থাকেন প্রেম ও বিয়ের স্বপ্নে। শুচি, পার্কি, প্রবালরা স্কুল পড়ুয়া কিশোর। খুব মজা করে খালেক ভাইকে নিয়ে। তিনি স্বপ্ন দেখেন, ওরাই তাকে পাইয়ে দেবে স্বপ্নের প্রেমিকা। সেই স্বপ্নে বিভোর বিত্তবান খালেক ভাই ওদের বিরিয়ানি খাওয়ান। সিনেমা দেখান। পূরণ করে চলেন ওদের সব শখ-আহ্লাদ।
এসএসসি’র গণ্ডি পেরিয়ে ওরা পা রাখে কলেজের আঙ্গিনায়। হঠাৎ একদিন দেখে, সেখানে হাজির খালেক ভাই। তিনি ভর্তি হয়েছেন বিকম ফার্স্ট ইয়ারে। সামরিক শাসনের কঠোর অর্গল তখন একটু একটু করে খুলছে। সামনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ওরা মজা করে খালেক ভাইকে ভিপি পদে দাঁড় করিয়ে দেয়। সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ওরা বোঝায় “গণগন্ত্র-সমাজতন্ত্র আব্বা-চাচারার ব্যাপার… আমরার না..” ওরা মজা করে শ্লোগান তোলে- খালেক ভাইয়ের মূলমন্ত্র কায়েম কর প্রেমতন্ত্র অনেক শিক্ষার্থী ব্যাপারটায় মজা পায়।
ওরা মজা করে ভোট দেয়। বিপুল ভোটে জিতে ভিপি নির্বাচিত হন আমাদের খালেক ভাই। ভোট নিয়ে ওরা যে মজা করতে চেয়েছিলো, তারই সুযোগে জন্ম নেয় এক দানব। মুখোশের আড়ালে থাকেন যে খালেক ভাই, এবার তিনি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকেন। নারী-পাগল ভিপি খালেক সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখেন। জড়িয়ে পড়েন বাড়ি দখল, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মে। ঘটতে থাকে গুম-খুনের নানা ঘটনা। তারপর? পড়ুন- ১৯৮২-‘৮৩ সালের প্রেক্ষাপটে হাসনাইন খুরশেদের লেখা রম্য উপন্যাস- আমাদের খালেক ভাই
লেখক পরিচিতি: লেখক, সাংবাদিক এবং টিভি ব্যক্তিত্ব হাসনাইন খুরশেদের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পড়াশুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে- গণ-যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতক (সম্মান)। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের বন্ধুর পথে হেঁটেছেন তেত্রিশ বছর। সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি ১৯৮৭ সালের মধ্যভাগে। পর্যায়ক্রমে পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে এক যুগ কাজ করেছেন রিপোর্টার হিসাবে। এরপর টানা দুই দশক কাজ করেন টেলিভিশন-মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে যোগ দেন একুশে টেলিভিশনের সূচনালগ্নের রিপোর্টিং বিভাগে। পর্দা-কাঁপানো এই টিভি রিপোর্টার ২০০৩ সালে চলে যান পর্দার নেপথ্যে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তোলেন এনটিভি। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়ে তোলেন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর। নেতৃত্বে থেকে পরিচালনা করেন আরো একাধিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল।
বায়ান্নে পৌঁছে শেকড়ে ফিরেছেন হাসনাইন খুরশেদ। কবি ও শিক্ষাবিদ পিতা প্রফেসর খুরশেদুল ইসলামের হাত ধরে কৈশোরে তার লেখালেখির শুরু। জীবনের চড়াই-উৎরাই পেরুনোর ব্যস্ততায় কেটেছে এতোগুলো বছর। চার দশকের বিরতি পেরিয়ে আবার ফিরেছেন সাহিত্যের অঙ্গনে। ভালোবাসার এই সাহিত্য-অঙ্গনেই জীবনের বাকিটা সময় থাকতে চান হাসনাইন খুরশেদ। তিনি চান সবার দোয়া ও ভালোবাসা।