আধুনিক সময়ে চা পান করে না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার এমনও মানুষ আছেন যারা প্রতিদিন চা পান না করে থাকতে পারে না। আসলেও তাই। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায়, পত্রিকা পড়ার সময় চা ছাড়া কি চলে! তবে দুধ চা, রং চা না হারবাল চা পান করবেন এ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ রং চা, কেউবা দুধ চা পান করতে পছ্ন্দ করেন। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, রং চা-ই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণাটি চালান।
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে ফ্ল্যাভোনয়েড নামে চমৎকার একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফ্ল্যাভোনয়েড খাবারের সঙ্গে বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে হৃদযন্ত্র অনেক বেশি সক্রিয় থাকে। ফলমূল বা শাক-সবজিতে যে পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যায় চায়ে।
গবেষণায় ১৬ জন নারীকে একবার রঙ চা, আরেকবার দুধ চা পান করতে বলা হয়। তারপর প্রতিবারই আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাদের রক্তনালীর প্রসারণ মাপা হয়। এতে দেখা যায়, রং চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায়। রক্তনালীর প্রসারণ উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে এ চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চায়ে থাকা ক্যাটেচিন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অপরদিকে, দুধ চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটাতে ব্যর্থ। কারণ দুধের মধ্যে থাকে ক্যাসেইন নামক একটি পদার্থ যা চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালী প্রসারণের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাগ্রিকালচার এর গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেন, ডায়াবেটিস রোগের জন্য রং চা অনেক উপকারি। চায়ের প্রভাবে কোষগুলো থেকে সাধারণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়। আর ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে এই ইনসুলিন নির্গত হওয়া খুবই জরুরি।
কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। চায়ে যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়, তাহলে ইনসুলিন এর নির্গমন শতকরা ৯০% কমে যায়।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, লাল চায়ে ধমনির কার্যক্রম তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু দুধ মেশালে চায়ের সুফল একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। গবেষকদের মত, রক্ত পরিবহনতন্ত্রের জন্য চায়ের উপকারিতার বিপরীতে কাজ করে দুধ। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী দুধ মেশালে চায়ের স্বাস্থ্যকর কিছু গুণ কমে যেতে পারে। তবে হালকা জ্বালের রং চা-ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে গবেষকদের মত।