পাহাড়ের স্থানীয় ঐতিহ্য বজায় রেখেই বান্দরবানে নির্মিত হচ্ছে ভূমিহীনদের ঘর। এসব ঘরের মাচাংয়ের নিচের অংশ জ্বালানি কাঠ সংরক্ষণ, পশুপালনসহ অন্যান্য কাজে আগের মতই ব্যবহার করা যাবে। খুঁটির ওপর নির্মিত হওয়ায় মেঝে সমতল করতে পাহাড় কাটারও প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিটি মাচাং ঘর নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭০ টাকা।
জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে এবং এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে এসব মাচাং ঘর নির্মাণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল বান্দরবান পরিদর্শণ শেষে মাচাং ঘর নির্মাণের যৌক্তিকতা বিবেচনায় এনে বিষয়টি অনুমোদন করে। ভূমিহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ের আওতায় বর্তমানে বান্দরবান সদর উপজেলায় ৯টি, আলীকদম উপজেলায় ১টি, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১৫ টি রোয়াংছড়ি উপজেলার ৪৫টি, লামা উপজেলায় ১৫টি, রুমা উপজেলায় ১০০টি এবং থানছি উপজেলায় ৪৫টি মাচাং ঘর নির্মিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে ৪ হাজার ১৩৩টি ভূমিহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫৬০টি গৃহনির্মাণের জন্য ৭০ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ১০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৯৬৮টি সেমিপাকা ঘর ভূমিহীন পরিবারের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩০টি মাচাং ঘরসহ সর্বমোট ৫৯২টি গৃহ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
এদিকে পাহাড়িদের জন্য সেমিপাকা গৃহের পরিবর্তে মাচাংঘর নির্মাণের উদ্যোগটি সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। বান্দরবান সদর উপজেলার ৬ নম্বর জামছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যসিংশৈ জানান, প্রত্যন্ত এলাকার পাহাড়ি জনগণ সেমিপাকা ঘরের চেয়ে মাচাং ঘরকে বেশি পছন্দ করছেন। এতে মাচাং এর নিচে পশুপালনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়।
দুর্যোগ সহনীয় ও পরিবেশবান্ধব এসব মাচাং ঘরে আলো বাতাস চলাচলের অবারিত সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদে সর্বপ্রথম মডেল হিসেবে নির্মিত হচ্ছে মাচাংঘর। তবে এখাতে সরকারি বরাদ্দ যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, একটি টেকসই মাচাং ঘর নির্মাণের জন্য কমপক্ষে চার লাখ টাকা বরাদ্দ করা প্রয়োজন।