পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার-প্রাপকের নাম উইলহেলম সি রোন্টগেন। পুরস্কার-প্রাপ্তির বছর ১৯০১। রোন্টগেনের জন্ম ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা যান। রঞ্জন-রশ্মি নামে যা আমরা জানি, সেই এক্স-রে আবিষ্কারের জন্য এই জার্মান বিজ্ঞানীকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল। রোন্টগেনের জন্ম প্রাশিয়ায়। বাপ মায়ের তিনি একমাত্র সন্তান, তাই আদর পেয়েছিলেন অত্যধিক। কিন্তু গোড়ার দিকে পড়ালেখায় মোটেই সুবিধে করতে পারেন নি, ফলে তাঁকে নিয়ে বাপ মায়ের উদ্বেগের সীমা ছিল না। বাপের ছিল কাপড়ের ব্যবসা। সেই ব্যবসার দেখাশোনা করা যে তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না, ছেলে সে-কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। বাপ তাতে একটু দুঃখিত হয়েছিলেন ঠিকই, তবে ছেলে যে কলেজে পড়তে চায়, এইটে শুনে কিছুটা অন্তত প্রবোধ পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, যাক, ছেলে তাহলে গোল্লায় যাচ্ছে না।
কিন্তু উইলহেলমের ছাত্র জীবনও স্বস্তিতে কাটেনি। মাস্টারমশাইয়ের ব্যঙ্গচিত্র আঁকার অভিযোগে ডাচ টেকনিক্যাল স্কুল থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। ছবিটা যে তাঁরই আঁকা, ছাত্র অবশ্য সে কথা স্বীকার করেন নি। উইলহেলমের বয়স তখন নেহায়তই ষোলো বছর। কলেজে ঢুকার জন্য যে পরীক্ষা নেয়া হয়, অগত্যা বাড়িতে বসে পড়াশুনা করে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে উইলহেলম তাতে বসেছিলেন বটে, কিন্তু পাশ করতে পারেন নি।
তাতে অবশ্য তিনি দমে যান নি। এক সুইস স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়ে বেরোলেন। তার পরেই তাঁর আগ্রহ গেল পদার্থবিদ্যায় গবেষণার দিকে। অধ্যাপক অগস্ট কুন্ডটের সহকারী হয়ে একটা ল্যাবরেটরিও তিনি তখন বসিয়ে ফেললেন। প্রাশিয়ায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতঃপর তিনি পদার্থবিজ্ঞান পড়িয়েছেন। প্রথম প্রথম বিনা বেতনেই পড়াতেন। পরে উয়রসবুর্গে পুরোপুরি অধ্যাপকের পদ পান। সেখানেই ১৮৯৫ সনে আবিষ্কার করেন এক্স-রে। মানুষটি ছিলেন একটু খেয়ালি প্রকৃতির। কয়েকটা ব্যাপার ও জিনিস তিনি আদপেই পছন্দ করতেন না। ঔদ্ধত্য, সততার ভান, লিখিত পরীক্ষা আর মাকড়সা ছিল তাঁর দুচক্ষের বিষ।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে, প্রথম বছরে তাই নিয়ে খুব জল্পনা চলেছিল। সম্ভাব্য প্রাপক হিসেবে যাঁদের কথা ভাবা হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মার্কনি আর বেকরেলের মত বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী। কিন্তু এক্স-রে আবিষ্কার নিয়ে চতুর্দিক তখন এতই তোলপাড় ছিল যে, রে্যান্টগেনের দিকেই ঝুঁকে পড়েছিল বিচারের পাল্লা। যে রশ্মি কাপড় ও শরীরের বাধা গ্রাহ্য করে না, তা নিয়ে উদ্ভট সব কথাও তখন কম রটে নি। নিউইয়র্কের একটি কাগজে লেখা হয়েছিল যে, এই রশ্মির সাহায্যে পাঠ্য-পুস্তকের যাবতীয় পৃষ্ঠা ছাত্রদের মস্তিকে প্রতিফলিত করা যায়। ফ্রান্সের এক গবেষক তো ঘোষণা করে বসলেন যে, তিনি এই রশ্মির সাহায্যে মানুষের আত্মার ছবিও তুলতে পেরেছেন। সবচেয়ে হাস্যকর কান্ড করেছিল লন্ডনের এক কোম্পানি। তারা বানিয়েছিল ‘এক্স-রে প্রুফ’ জামাকাপড়। বিজ্ঞান যাতে না জামাকাপড় ভেদ করে চোখ চালাতে পারে।