তিন দিনের অঘোষিত ধর্মঘটের পর সোমবার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে বাস চলাচল করবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রোববার রাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুই সমিতির এই সিদ্ধান্তের ফলে সোমবার সকালে রাজধানীবাসী কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসসহ গণপরিবহন পাবেন। দূরপাল্লার বাসগুলোও চলাচল করবে। এতে ঢাকার বা ঢাকার বাইরে আটকেপড়া মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। অবসান হবে সারা দেশের মানুষের চরম ভোগান্তির।
গত শুক্রবার থেকে রাজধানীর সড়কপথ কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল দেশের অন্য শহর থেকে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে আসায় সবার সঙ্গে আলাপ করে গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সারা দেশের পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে। আমরা নিরাপদ বোধ করছি। বাস চালানোর মতে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা গাড়ি চালিয়ে থাকি। তখন পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা দিত। কিন্তু এবার পুলিশ অনেকটা নিরব ছিল।
তিনি বলেন, এমনকি কোথাও কোথাও পুলিশের সামনে গাড়ি আক্রান্ত হলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। রোববার পুলিশ মাঠে নেমেছে। আশা করি নিরাপত্তার সমস্যা হবে না। তাই গাড়ি নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে চলমান ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকাসহ বেশিরভাগ জেলায় অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সরাসরি ধর্মঘটের কথা স্বীকার করছেন না। তারা বলছেন, আন্দোলনরত ছাত্ররা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা বাস চালাচ্ছেন না।
জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রংপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বেনাপোলসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী যুগান্তরকে বলেন, আমরা কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলিনি। অনেক মালিকই নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়ি চালাচ্ছেন না। তবে কোনো ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়নি।
গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হল শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন।
বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ৯ দফা দাবিতে টানা আট দিন ধরে আন্দোলন করেছেন।
এ আন্দোলনের জের ধরে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় প্রথমে বাস চলাচল সীমিত হয়ে যায়। পরে বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
সূত্র: যুগান্তর অনলাইন