প্রচ্ছদ বাংলাদেশ সিলিন্ডার নিয়ে বেলুন বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিলো পুলিশ

সিলিন্ডার নিয়ে বেলুন বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিলো পুলিশ

প্রতীকি ছবি

রাজধানীর রূপনগরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহাদ (৮) নামে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সে মারা যায়। এ নিয়ে এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৭ জনে দাঁড়াল। এদিকে ভয়ানক এই বিস্ফোরণে অনেক শিশু হতাহতের পর প্রকাশ্যে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বেলুন বিক্রি বন্ধের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। এছাড়া রূপনগর থানায় বেলুন বিক্রেতা আবু সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

গতকাল ডিএমপি সদর দপ্তরে এক বৈঠকে কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম পুলিশ কর্তাদের এ নির্দেশনা দেন। এছাড়া ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, ডিএমপি কমিশনার প্রকাশ্যে সিলিন্ডার নিয়ে বেলুনে গ্যাস ভরা ও বিক্রি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন থানা পুলিশকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিলিন্ডার থেকে এভাবে গ্যাস ভরার অনুমোদন নেই জানিয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছেন। এভাবে যারা বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

আরেক শিশুর মৃত্যু : গত বুধবার বিকেলে রূপনগর আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সড়কে মনিপুর স্কুলের বিপরীতে বস্তির পাশে ভ্যানে বেলুন বিক্রির সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত হয় নিহাদ। গতকাল ভোরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। নিহাদ ময়মনসিংহের সারোয়ার হোসেনের ছেলে। সে পরিবারের সঙ্গে শিয়ালবাড়ি বস্তিতে থাকত। 

নিহাদের মা হালিমা আক্তার গতকাল ঢামেক মর্গে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘বস্তির পাশে বেলুনওয়ালা আইলেই আমার ছেলে ছুইটা যাইত। তয় এমন হইব কহনো ভাইবা দেহি নাই। পোলাডার লাইগা পরানডা ফাইডা যায়।’

নিহাদসহ এ বিস্ফোরণের ঘটনায় সাত শিশুর মৃত্যু হলো। অন্যরা হলো ফারজানা (৭), নূপুর (১১), রুবেল (১০), রমজান (৮), শাহিন (৯) ও রিয়া মনি (১০)। ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক শিশুর পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্বজনরা জানিয়েছেন, গতকাল নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে লাশ দাফন করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে শিয়ালবাড়ি বস্তিতে গিয়ে দেখা যায় থমথমে পরিবেশ। সবার মুখে ঘুরেফিরে একই কথা। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে। এলাকাবাসী জানান, এভাবে প্রকাশ্যে গ্যাস ভরে আর বেলুন বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মিরপুর এলাকার একটি স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালীন বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন আহত হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝেমধ্যে এ রকম ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই নিয়ে কার্যত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। এ কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

বেলুন বিক্রেতাকে আসামি করে মামলা : গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় গত বুধবার রাতে রূপনগর থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। এতে বেলুন বিক্রেতা আবু সায়ীদকে আসামি করা হয়েছে।

ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ বলেন, অপরাধজনক নরহত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় সেও আহত হয়েছে। পুলিশ প্রহরায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রকাশ্যে যাতে কেউ বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে না পারে গতকাল থেকেই বিভিন্ন থানা পুলিশ এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ধরনের সিলিন্ডার বহনকারী বেলুন বিক্রেতাদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া বুয়েটসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির এক কর্মকর্তা।

ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘এভাবে প্রকাশ্যে যাতে কেউ বেলুনে গ্যাস ভরে বিক্রি করতে না পারে সেদিকে নজরদারি শুরু করেছি আমরা। যেহেতু শিশুরাই এই বেলুনের বড় ক্রেতা তাই স্কুলের সামনেসহ বিভিন্ন জনসমাস্থলে নজরদারি চলছে।’

শেয়ার করুন