দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা মনে করেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার নিজের প্রণীত কোড অব কন্ডাক্ট ভঙ্গ করেছেন। তারা বলেন, সিনহার বই প্রকাশ দুঃখজনক। এ ব্যাপারে একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ তার মতামতে বলেন,
১। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিচার বিভাগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জেলা জজ আদালতসমূহ পরিদর্শন, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, মাজারের ওরস উদ্বোধন, মন্দির উদ্বোধন এবং উন্মুক্ত আদালতে বসে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য, সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেছেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(১) ও (১৫) লঙ্ঘিত হয়েছে।
২। তিনি বিভিন্ন সময়ে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে তার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যা কোড অব কন্ডাক্ট এর অনুচ্ছেদ-(২১) ও (২২) এর পরিপন্থী।
৩। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(৩৪) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৪। তার সাথে আশিয়ান সিটি, সিটিসেল এবং অনেক বড় ব্যবসায়ীগণ যোগাযোগ করে অনেক উপঢৌকন দিয়েছেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ- (২৫) ও (৩৪) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৫। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম এর পরিবার তাদের আপিল মামলা শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(১১), (১৭), (৩০) ও (৩১) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৬। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সর্বদাই যোগাযোগ রক্ষা করেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(৫), (১৮) ও (২৮) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৭। তিনি বিভিন্ন সময় ভারত, সিঙ্গাপুর, কানাডা, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা সফর করার সময় সেখানে অবস্থিত বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা যায়। এতে তিনি লন্ডনে অবস্থানকালে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সেখানে তাকে রাষ্ট্রপতি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে শুনা যায়। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(১২) ও (২৭) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৮। জনকণ্ঠ পত্রিকার বিরুদ্ধে কনটেম্পট মামলায় রেসপন্ডেন্ট পক্ষের আবেদনের পরও প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একটি মামলায় তিনি বিচার করা থেকে বিরত থাকেননি বরং তিনি ওই মামলায় বিচার করতে পারেন বলে উন্মুক্ত আদালতে মন্তব্য করেছিলেন। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(২৩) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৯। ব্যক্তিগত সম্পদ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করেননি বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(১৬) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
১০। সংবিধানের ১৬তম সংশোধনী বাতিলপূর্বক সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে। এতে কোড অব কন্ডাক্ট অনুচ্ছেদ-(২) ও (৪) লঙ্ঘন করা হয়েছে।
উপরোক্ত কার্যকলাপ ১৬তম সংশোধনীর রায়ে উল্লেখিত তার রচিত ৩৯ দফার কোড অব কন্ডাক্ট এর অনুচ্ছেদ-(১), (২), (৪), (৫), (১১), (১২), (১৫), (১৬), (১৭), (১৮), (২১), (২২), (২৩), (২৫), (২৭), (২৮), (৩০), (৩১) ও (৩৪) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোড অব কন্ডাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।