রফিকুল আলম মামুন।। একের পর এক অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় দিনে দিনে অশান্ত হয়ে উঠছে র্পাবত্য জেলা বান্দরবান। সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত এই জনপদে চলতি বছরেই অপহরণ ও খুন হয়েছেন অন্তত পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী। আরো অনেকে পরিণত হয়েছেন টার্গেটে।
অপ-রাজনীতি, আধিপত্য বিস্তার ও খুন-গুমসহ অব্যাহত চাঁদাবাজিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পর এবার বান্দরবানের নামও যুক্ত হতে চলেছে। হঠাৎ করে বান্দরবানে হত্যাকান্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এক প্রকার অজানা আতংকে আছেন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা। একইসাথে আতংক গ্রাস করছে রাজনীতির সাথে যুক্ত নন এমন মানুষেরাও।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের হিসেব মতে, চলতি বছরেই খুন ও অপহরণের শিকার হন অন্তত ৬ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী।
২০১৬ সালের ১৪ জুন বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মংপ্রু র্মামাকে অপহরণ করা হয় রোয়াংছড়ি থেকে ।
চলতি বছরের ১৯ মে আওয়ামী লীগ নেতা ক্যহ্লা চিং মার্মাকে গুলি করে হত্যা করা হয় বান্দরবান রাঙামাটি সীমান্তের বাঙ্গালহালিয়া এলাকায়।
মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ২০ মে অপর আওয়ামীলীগ নেতা ক্যচিং থোয়াই মার্মাকে গুলি করে হত্যা করা হয় রাজবিলা ইউনিয়নের রাবার বাগান এলাকায়।
মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে ২৩ মে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা চথোয়াই মং মার্মাকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যা করা হয় সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নে।
২৫ জুন অংসিংচিং মার্মা কে রোয়াংছড়ি উপজেলার থোয়াইংগ্য পাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
সবশেষ গত ২২ জুলাই রোয়াংছড়ি উপজেলার তারাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মং মং থোয়াই মার্মাকে রোয়াংছড়ি থেকে বান্দরবান ফেরা পথে শামুকঝিরি এলাকায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়।
এদিকে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মী হত্যার পেছনে জনসংহতি সমিতির হাত রয়েছে বলে দাবি করে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা। কিন্তু অভিযোগ অস্বীকার করে এসব ঘটনার জন্য মগ লিবারেশন পার্টিকে দায়ী করছে জেএসএস। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’র কিছু দলছুট সদস্যকে নিয়ে গঠিত মগ লিবারেশন পার্টির বিরুদ্ধেও পাহাড়ে গুম-খুনের অভিযোগ নতুন নয়।
এসব ঘটনার জেরে বিভিন্ন সভা সমাবেশ থেকে জনসংহতি সমিতির নেতাদের হুঁশিয়ার করে হরতাল অবরোধের মতো কমর্সূচিও পালন করে আওয়ামী লীগ। এসব ঘটনায় জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা কেএসমংসহ শতাধিক জেএসএস নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে কেএসমং, ক্যবামংসহ বেশ কয়েকজন কারাগারে আছেন। গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ.কে. এম. জাহাঙ্গীর বলেন- ‘পাহাড়ে কারা হত্যা চাঁদাবাজি করে প্রশাসন সব জানে’। তিনি জনসংহতি সমিতির দিকে ইংগিত করে সব অপকর্মের জবাব দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা আমাদের ৬০ জন নেতার নাম দিয়ে হিটলিস্ট তৈরি করেছে। একে একে তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।’
এ রকম একের এক হত্যাকান্ডে আতংকে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের স্থানীয়রা। এদিকে পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের দমন করতে যৌথবাহিনীও নানা সময় অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
দোষীদের সনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান, বান্দরবানের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, পাহাড়ের আধিপত্য বিস্তারে খুনোখুনির ঘটনা নতুন নয়। আমরাও বসে নেই। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিন র্পাবত্য জেলায় মূলতঃ সক্রিয় রয়েছে চারটি আঞ্চলিক সংগঠন। সেগুলো হলো- জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস (এমএন লারমা), ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। এর মধ্যে বান্দরবানে সক্রিয় রয়েছে শুধু জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)।