শেরে বাংলা নগরে সচিবালয় স্থানান্তর করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রতীকি ছবি

তীব্র স্থান সংকট, মন্ত্রী ও সচিবদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকাসহ নানা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ সচিবালয় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এক মন্ত্রণালয়ের অফিস একাধিক ভবনে। মন্ত্রী বসেন সচিবালয়ে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসেন সচিবালয়ের বাইরে, এমন মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। নির্মাণাধীন একটি ২০ তলা ভবন উদ্বোধনের আগেই অফিস করা শুরু হয়েছে। আরেকটি ২০ তলা ভবন নির্মাণ শেষ হলেও সচিবালয়ে জায়গার সংকট শেষ হবে না। এ অবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শিক্ষা ভবন এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মধ্যবর্তী জায়গায় একটি নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব

দিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রধানমন্ত্রীকে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রস্তাবটি দেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠকে অংশ নেওয়া এক সিনিয়র মন্ত্রী জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের প্রস্তাব শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহরে কিছু খালি জায়গা রাখতে হয়। পৃথিবীর সব বড় শহরেই অনেক খোলা প্রান্তর রয়েছে। সেই তুলনায় আমাদের বড় শহরগুলোতে খোলা কোনো জায়গাই নেই। তাই খোলা জায়গা থাকলেই ব্যবহার করা উচিত নয়। শিক্ষা ভবন ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাঝের জায়গাটি খালিই থাকুক। তাছাড়া সচিবালয় তো শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করার কথা। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থপতি লুই কানের করা সংসদের মূল নকশা আনা হয়েছে। সেটা দেখে নতুন সচিবালয় করতে হবে। পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে দিন। সচিবালয়ে আর কোনো নতুন ভবন হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নির্দেশনা পেয়েছি। পরিকল্পনা করে দ্রুত সচিবালয় স্থানান্তর করা হবে। প্রস্তাবিত সচিবালয় হবে প্রশাসনিক কাজের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। যেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের অত্যাধুনিক সুবিধা থাকবে। সচিবালয়ের ভেতর সবুজ বাগান থাকবে। ফুডকোর্ট থাকবে। সুন্দর টয়লেট ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপদ বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশনের আধুনিক সব ব্যবস্থা থাকবে।’

লুই কানের নকশা অনুসরণ করে সচিবালয় নির্মাণ করা হবে বর্তমান চন্দ্রিমা উদ্যানের একটি অংশে ও বাণিজ্যমেলা যে স্থানে আয়োজন করা হয় সেই স্থানে। একসময় পূর্বাচলে সচিবালয় স্থানান্তর করার পরিকল্পনা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে সরকার। সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তর করা হবে বলেই বিভিন্ন অধিদপ্তর আগারগাঁওয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সচিবালয়ের বর্তমান ভবনগুলো কী কাজে ব্যবহার হবে জানতে চাইলে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সচিবালয়ের বেশিরভাগ ভবন পুরাতন। কয়েকটি ভবনের মেয়াদ অনেক আগেই পার হয়ে গেছে। তারপরও এসব ভবনে মন্ত্রীরা বসেন ও দীর্ঘ সময় অফিস করেন। এমনকি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ভবনটিও ব্যবহারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই দিনের পর দিন মন্ত্রিসভা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত গত বছর সেখান থেকে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ভেন্যু সরিয়ে নেওয়া হয়।

বর্তমানে বেশিরভাগ মন্ত্রিসভা বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। কিছু কিছু বৈঠক সচিবালয়ে হলেও মন্ত্রিপরিষদ ভবনে হচ্ছে না। সেসব বৈঠক হয় অন্য ভবনে। মন্ত্রিপরিষদ ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। এরপর ধাপে ধাপে সচিবালয়ের আরও অনেক ভবন ভাঙতে হবে। এসব ভবন ভেঙে জায়গা খালি করা হবে। আর যেসব ভবন থাকবে সেসব ভবনে বিভিন্ন দপ্তরের অফিস করা হবে। তিনি আরও জানান, গুলিস্তান থেকে শিগগিরই জিপিও সরিয়ে আগারগাঁওয়ে নেওয়া হবে। ওই জায়গায় বাগান করার নির্দেশনা আগেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেয়ার করুন