সাজিয়া তার আট ও চার বছর বয়সী সন্তান কে নিয়ে ঢাকা থেকে যাবেন স্বামীর কাছে বার্মিংহামে। ভ্রমণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, দুশ্চিন্তায় সাজিয়ার ঘুম হারাম হওয়ার অবস্থা। দুই সন্তানকে নিয়ে এত দূরের জার্নি কখনো করেননি তিনি। তার উপর একা। ছোট সন্তান খুব দুরন্তও। সব মিলিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন তিনি।
শিশুদের নিয়ে ভ্রমণ একইসাথে খুবই আনন্দময় এবং ক্লান্তিকর। কিন্তু ক্লান্তি এবং দুশ্চিন্তার অংশটুকু এড়িয়ে ভ্রমণ শুধু আনন্দময় করা যায় সাধারণ কিছু জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখলেই।
১. শিশুকে আরামদায়ক এবং ভ্রমণ উপযোগী পোশাক পরান। যাত্রা শুরুর স্থান এবং গন্তব্য স্থানের তাপমাত্রায় ভিন্নতা থাকলে সে উপযোগী পোশাক সাথে রাখুন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যানে ভ্রমণ করলে হাল্কা উষ্ণ পোশাক শিশুর জন্য উপযোগী।
২. শিশুর প্রিয় খেলনা সাথে রাখুন। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে শিশুর পরিচিত পছন্দের কোন খেলনা বা পুতুল শিশুকে অপরিচিত পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
৩. ভ্রমণের সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পানি পান করাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন কোনভাবেই পানিশূণ্যতায় না ভোগে। পানিশূণ্য হলে শিশু খিটখিটে মেজাজ দেখাবে এবং অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
৫. শিশুর পছন্দের নাশতা বা ফল সাথে রাখুন। ভ্রমণকালীন প্রাপ্ত খাবার শিশুর না খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। সেক্ষেত্রে শিশুর পছন্দের খাবার তার ক্ষুধা নিবারণ করবে।
৫. শিশু যদি বুকের দুধ খাওয়ার উপযুক্ত হয় তো তাকে ভ্রমণের সময় বুকের দুধ খাওয়ালে সে হাসিখুশি ও সাবলীল থাকবে। বিশেষ করে বিমানে ভ্রমণের সময় বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় বুকের দুধ দিলে শিশুর কানে বাতাসের চাপের তারতম্যের অসুবিধা হবেনা এবং শিশু শান্ত থাকবে।
৬. ভ্রমণের জন্য শিশুর নিজস্ব কিছু জিনিস তাকে ব্যবহার করতে দিলে এবং কাজ করতে দিলে শিশু ভ্রমণে উৎসাহী হয় এবং সহযোগিতা করে। তার নিজস্ব একটা ছোট্ট ব্যাগ কিংবা নেক পিলো( neck pillow), পানির বোতল, পাসপোর্ট ব্যাগ এধরনের জিনিস ব্যবহার করতে দিলে অথবা তার নিজের টিকিট কাউন্টারে তাকেই দিতে দিলে শিশু দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করে।
৭. বিমানে ভ্রমণের সময় সাধারণত যাত্রীকে পানির বোতল সাথে নিয়ে বিমানে উঠতে দেয়া হয়না। কিন্তু আপনার সাথে যদি শিশু থাকে তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তা উল্লেখ করুন অন্যথায় বিমানের ভেতর শিশুর জন্য পানি এবং প্রয়োজনীয় জিনিস চেয়ে রাখুন।
৮. ভ্রমণের সময় শিশুরা সাধারণত উত্তেজিত থাকে। সেই উত্তেজনার বহি:প্রকাশ আনন্দ কিংবা কান্নাকাটি দুইভাবেই হতে পারে। এ অবস্থায় নিজেকে শান্ত থাকতে হবে। আপনার সন্তানের চিৎকারে বা কান্নায় অন্যদের অসুবিধা হচ্ছে, এটা ভেবে অস্বস্তিতে না ভুগে সন্তান যেভাবে শান্ত হতে পারে সেদিকে মন দিন। বেশি ছোট হলে তাকে কোলে নিয়ে একটু উঠে দাঁড়ান কিংবা সম্ভব হলে হাঁটুন। ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করুন। খাবার বা পানি দিতে পারেন, গান/কবিতা/গল্প শোনাতে পারেন অথবা শুধুই আদর করতে পারেন। সন্তান একটু বড় হলে তার সাথে বসে বসে খেলা যায় এমন কিছু খেলতে পারেন। কথা বলুন, গল্প শোনাতে পারেন কিংবা বই পড়াতে পারেন। তার প্রিয় কোন গান/কার্টুন মোবাইলে বা স্ক্রিনে দেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে আগে থেকেই ডিভাইসে শিশুর পছন্দের কার্টুন বা গেইম ডাউনলোড করে রাখলে ভ্রমণে তা কাজে দেয়।
৯. ভ্রমণকালীন শিশুদের খাওয়াদাওয়া এবং ঘুমের রুটিনে ব্যাঘাত ঘটে বা পরিবর্তন হয়। এজন্য শিশু যদি এসময় খেতে না চায় তবে তাকে জোর করে না খাইয়ে সময় দেয়া উচিত। সে তার সময় এবং রুচিমত নিজেই খাবার খেতে চাইবে।
১০. ভ্রমণকালীন পুরোটা সময় শিশুকে কোলে রাখা অভিভাবকদের জন্য যথেষ্ট ক্লান্তিকর। এক্ষেত্রে বেবী ক্যারিয়ার কিংবা স্ট্রোলার/প্যারাম্বুলেটর হতে পারে ভ্রমণের জন্য অন্যতম সহায়ক উপকরণ।
১১. ভ্রমণে অন্যদের সাহায্য নিতে কুন্ঠিত হবেননা। শিশুকে কোলে রেখে অন্য অনেক কিছুই করা (যেমন: ব্যাগ নামানো, খাবারের ট্রে সরিয়ে রাখা ইত্যাদি) সম্ভব নাও হতে পারে। এসব প্রয়োজনে কিংবা কোন শূণ্য সিট সন্তানের জন্য ব্যবহার করতে চাইলেও অন্য যাত্রী কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাহায্য নিন। এতে ভ্রমণ তুলনামূলক সহজ হয়। তবে অচেনা বা স্বল্প পরিচিত কারো কাছে সন্তানকে রেখে আপনি নিজে অন্য কাজ করতে যাবেননা। ভ্রমণকালে সন্তানকে পুরোটা সময় আপনার বা পরিচিত মানুষের সাথে রাখুন।
১২. ভ্রমণের সময় অনেক মানুষ এবং অচেনা পরিবেশ শিশুদেরকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে শিশু আতংকে অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে ভ্রমণের পুরো সময়টাতে শিশুর সাথে কথা বলতে থাকলে শিশুর মনের এই ভীতি কমে। মনে করুন, চেক ইনে ব্যাগ দিয়ে দাওয়ার সময় শিশুর মনে হতে পারে তাদের জিনিস নিয়ে যাচ্ছে কেউ। তখন তাকে বলুন যে, তাদের ব্যাগগুলোকে নিরাপদ জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। কিংবা আসনে বসে সিটবেল্ট কেন বাধা হচ্ছে তা বুঝিয়ে বলুন। এরকম তথ্য শেয়ার করতে থাকলে অচেনা অজানা পরিবেশেও শিশু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
১৩. শিশুকে নিয়ে ভ্রমণের সময় আপনার শিশু এবং তার অভিভাবক হিসেবে আপনি কাউন্টারে বা লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে, বসার আসন নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য অনেক জায়গায় অগ্রাধিকার পাবেন। শিশু হিসেবে এটি তার অধিকার। শিশুর এই বিশেষ সুবিধা আদায় এবং সংরক্ষণে সচেতন থাকবেন।