পশ্চিমবঙ্গে বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী গতকাল বুধবার ছিল ২২ শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম প্রয়াণদিবস। দিবসটিকে ঘিরে গতকাল বিকেলে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন চত্বর সবুজায়নের লক্ষ্যে এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়।
কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান কাসিয়া নোদোসা নামের গাছ লাগিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন, কলকাতার উপহাইকমিশনে নিযুক্ত প্রথম সচিব (শিক্ষা) শেখ শফিউল ইমাম, প্রেস সচিব মোফাকখারুল ইকবালসহ বিশ্বভারতীর শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও বিশিষ্টজনেরা।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে তৌফিক হাসান বলেন, বাংলাদেশ ভবন চত্বরে এই বৃক্ষরোপণের ফলে এর চত্বর সবুজায়ন হবে। সৌন্দর্য বাড়বে। পর্যটক ও দর্শনার্থীরা এই ভবন দেখে আরও মুগ্ধ হবেন।
এই ভবন উদ্বোধনের আগে বিশ্বভারতীর শিশু, কিশোর ও তরুণ শিক্ষার্থীরা গান গেয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে এবং নৃত্যের তালে তালে বাংলাদেশ ভবন চত্বরে প্রবেশ করে। এরপর তারা বৃক্ষরোপণের জন্য নির্দিষ্ট মঞ্চের পাশে বসে কবিগুরুর গান পরিবেশন করে।
আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণের পর বিশ্বভারতীর প্রথা মেনে নতুন গাছের চারায় পানি ঢালা হয়। পাখা দিয়ে হাওয়া দেওয়া হয়।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই গড়া হয়েছে এই বাংলাদেশ ভবন। এই ভবন নির্মাণের জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিল দুই বিঘা জমি। বাংলাদেশ এ ভবন নির্মাণের জন্য দিয়েছিল ২৫ কোটি রুপি। ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে নির্মিত হয়েছে এই ভবন। এই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে। ভবনে রয়েছে ৪৫০ আসনবিশিষ্ট একটি মিলনায়তন। অনুষ্ঠান করার সর্বাধুনিক একটি মঞ্চ। থাকছে দুটি সেমিনার হল। একটি গ্রন্থাগার, একটি জাদুঘর, একটি গবেষণা ঘর, একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষ ও একটি বড় মাপের ক্যাফেটেরিয়া।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের একটা বড় সময় বাংলাদেশে কাটিয়েছেন। কবিগুরু বাংলাদেশে অবস্থানকালে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতেন। তাঁর পদ্মা ও চপলা নামে দুটি নৌকা ছিল। কবিগুরু এই নৌকায় চড়ে বহু কবিতা লিখেছেন, গান লিখেছেন। আর সেসব স্মৃতির কথা এবার উঠে আসছে বাংলাদেশ ভবনে। যদিও বিশ্বভারতীর অনুরোধে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র জাদুঘরের জন্য উপহার দিয়েছেন সেই পদ্মা ও চপলা বোটের রেপ্লিকা। বাংলাদেশ সরকার জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার জন্যও দিয়েছেন এই বোটের রেপ্লিকা।
তাই কবিগুরুর স্মৃতিবাহী নানা সামগ্রী ও স্মারক নিয়ে এবার বাংলাদেশ ভবনের জাদুঘর সাজানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ নিয়ে যাঁরা এখানে গবেষণা করতে চান, তাঁদের জন্যও সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বাংলাদেশ ভবনের গ্রন্থাগারকে। এখানে মিলবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, নানা ছবিসহ কবিগুরুর জীবনের নানা কথা, বিশেষ করে বাংলাদেশ অবস্থানের নানা স্মৃতি বহনকারী ছবি, পাণ্ডুলিপি, স্মারকসহ আরও অনেক কিছু।
গত ২৫ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বাংলাদেশ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।