২১ বছরেও পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাথে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর। ভূমি কমিশন গঠিত হলেও এখনো বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি কমিশন। আওয়ামী লীগের সাথে তৈরি হওয়া এই দূরত্ব এখন ভোটের মাঠেও দৃশ্যমান। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামের আসনগুলোতে চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সাথে বিএনপি’র গোপন বোঝাপড়ারও আভাস দিচ্ছেন অনেকে।
চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে, রয়েছে মৌন এবং প্রকাশ্য বিরোধিতাও। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ দাবি করছে। কিন্তু এর মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। গত ২৯ নভেম্বর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে পাহাড়ে নির্বাচনী পরিবেশ নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি। চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে মতদ্বৈততার কারণে চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে থাকা দু’টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জনসংহতি সমিতি এবং ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) উভয়েই গত কয়েক দফায় সরাসরি সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে। এর ফলে গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়। জেএসএস পক্ষে থাকায় ’৯১ ও ’৯৬ সালে রাঙামাটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের। এর মধ্য দিয়ে জেএসএস আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের অনাস্থার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে জেএসএস ২০০১ থেকে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং সে বছর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির আসন বিএনপি’র হাতে চলে যায়। এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, চুক্তি একেবারে বাস্তবায়ন হয়নি, এটা ঠিক নয়। আবার পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে তা-ও নয়। অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে পর্যাপ্ত সময় দরকার।
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, গত কয়েক বছরে অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। অনেককে দল থেকে পদত্যাগেও বাধ্য করা হয়েছে।
রাঙামাটির সংসদ সদস্য এবং জেএসএস-এর সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদগুলো সক্রিয় করা হয়নি। যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
এসব টানাপড়েনে কার্যতঃ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে আঞ্চলিক দলগুলোর বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ভোটের মাঠেও। রাঙামাটি আসনে এবারও জেএসএস-এর প্রার্থী হিসেবে থাকছেন উষাতন তালুকদার। খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ-এর পক্ষে সচিব চাকমা এবং নতুন কুমার চাকমা যে কোনো একজন প্রার্থী হিসেবে থাকবেন বলে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বান্দরবানে এই দুই দল কোনো প্রার্থী দেয়নি।