শর্টহ্যান্ড বলতে বোঝায় দ্রুত হাতে লেখা। একজন মানুষ মুখে যত তাড়াতাড়ি কথা বলতে পারে তত তাড়াতাড়ি সেগুলি হাতে লিখতে পারে না। শর্টহ্যান্ডের আর একটি প্রতিশব্দ হল ‘স্টেনোগ্রাফি’। গ্রিক ভাষায় ‘স্টেনোস’ শব্দের অর্থ জায়গা বাঁচানো; গ্রাফিন মানে লেখা। শর্টহ্যান্ডে এরকম তাড়াতাড়ি লেখা আদৌ নতুন নয়, গ্রিকরা সম্ভবত এটির ব্যবহার জানতেন। রোমানরা অবশ্যই শর্টহ্যান্ডে লিখতেন। স্কুলের ছাত্রদের এই শর্টর্হ্যান্ড শেখানো হত।
আধুনিক শর্টহ্যান্ডের ইতিহাস খুঁজতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে ১৫৫৮ সালে। ডঃ টিমোথি ব্রাইট একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। ব্রাইটের নিয়মটি শেখা অবশ্য বেশ কষ্টসাধ্য, সেখানে প্রত্যেক শব্দের জন্য আলাদা আলাদা একটি চিহ্ন রয়েছে। জন উইলিসের ‘আর্ট অব স্টেনোগ্রাফি’ বইটি ১৬০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৬৪৭ সালের মধ্যে বইটি চৌদ্দটি সংস্করণ বেরিয়ে গিয়েছিল। উইলিসের পদ্ধতিটিকে টি শেল্টন আর একটু উন্নত করেছিলেন, স্যামুয়েল পেপিজ শেল্টনের পদ্ধতিটিই অনুসরণ করতেন। তাঁর সমস্ত ডায়রি শর্টহ্যান্ডে লেখা।
উইলিস ও তাঁর পরবর্তী সকলের শর্টহ্যান্ড পদ্ধতি অক্ষরের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিটি বর্ণ বা অক্ষর একটি সোজা বা বাঁকা রেখা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়, কোনও কোনও রেখায় আবার জুড়ে দেওয়া হয় আংটার মতো একটি ছোট্ট রেখা। স্বরবর্ণগুলিকে নির্দেশ করা হত আবছাভাবে, ফলে এই পদ্ধতি নিয়েও আস্তে আস্তে বিতর্ক গড়ে ওঠে। তখন বর্ণ পদ্ধতি বদলে এল উচ্চারণ পদ্ধতি (ফোনেটিকস)। এই পদ্ধতিতে শব্দের উচ্চারণের ওপর নির্ভরশীল, লেখার অক্ষর বা বর্ণের ওপর নয়।
শর্টহ্যান্ডের মূল ভিত্তি হল শব্দের উচ্চারণ। লেখার সময় সাধারণ শব্দের বানানে অনর্থক কিছু বর্ণ বা অক্ষর ব্যবহার করা হয়। শর্টহ্যান্ডে লেখার সময় শুধুমাত্র উচ্চারিত বর্ণটিই গুরুত্বপূর্ণ, লেখ্য বানানের অনর্থক শব্দগুলি সেখানে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। যখন একটি বর্ণের উচ্চারণ দু’রকম (ম অক্ষরটি ‘মরাব’ ও ‘মরহমবৎ’ দুই শব্দে দু’রকম উচ্চারিত হয়) তখন শর্টহ্যান্ডের চিহ্নগুলিও আলাদা হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে একের পর এক অনেক শর্টহ্যান্ড পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। কোনোটিই শেষ অবধি ধোপে টিকে নি। বিখ্যাত স্টেনোগ্রাফার স্যার আইজাক পিটম্যান প্রথমে টেলরের পদ্ধতিতে কাজ শুরু করেছিলেন, পরে নিজস্ব এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকায় তাঁর পদ্ধতি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে, ইংরেজি ছাড়াও অন্য কয়েকটি ভাষায়ও ওই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত শর্টহ্যান্ড পদ্ধতি। অবশ্য, বেল, স্লোন, গ্রেগ এঁদের নিয়মও প্রায়ই ব্যবহার করা হয়।
শর্টহ্যান্ডের এই লাইনগুলিতে পিটম্যানের পদ্ধতিতে ‘তিন অন্ধ ইঁদুর (থ্রি ব্লাইন্ড মাইস) নামের ছড়াটি লেখা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গাঢ় ও হালকা বিভিন্ন রেখার সমন্বয়ে এই পদ্ধতিটি গঠিত।
মুখের কথার থেকেও শর্টহ্যান্ড আরও দ্রুতবেগে লেখা যায়। বক্তারা সাধাণেত মিনিটে গড়ে ১৫০ টি শব্দ উচ্চারণ করেন, আর শর্টহ্যান্ড? এক শর্টহ্যান্ড প্রতিযোগিতায় প্রতি মিনিটে ২৫০ টি শব্দ লেখা হয়েছিল।