বাঙালির খাদ্য তালিকায় একটা বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে মাছ। তবে শুধু বাঙালি নয়, কম্বোডিয়াতেও সবজি বা তরকারিতে মাছ জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সে মাছ লোহার মাছ। রান্না সুস্বাদু করার জন্য নয়, শরীরের আয়রন অভাব দূর করতে কম্বোডিয়াতে ব্যবহার করা হয় লোহার তৈরি মাছ।
পুষ্টিবিদদের মতে, রক্তশূন্যতা বিশ্বের সবেচেয়ে বড় অপুষ্টিজনিত সমস্যা। এটি মূলত অন্তঃসত্ত্বা নারীদের আর বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। জানা গেছে, কম্বোডিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের মতো নারী ও শিশু রক্তশূন্যতায় ভোগেন।
রক্তশূন্যতার সমস্যা দূরীকরণের আয়রন ট্যাবলেট বা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিত্সকেরা। কিন্তু আয়রন ট্যাবলেটের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু কম্বোডিয়ায় ওষুধগুলো তেমন সহজলভ্য নয়, তাছাড়া অনেকের এই সব আয়রন ট্যাবলেট কেনার সামর্থ্য নেই। তাই শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে এই লোহার মাছ দিয়ে রান্নার কৌশলটি বের করেছেন কানাডার বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার চার্লস।
ডঃ চার্লসের নির্দেশ মতো কম্বোডিয়ার একাধিক গ্রামে বাসিন্দারা রান্নায় সময় লোহার তৈরি মাছ ছেড়ে দিয়ে ফুটিয়ে নেন। রান্নার পদ্ধতিতে বা উপকরণে বদল বলতে সেই এক টুকরো লোহার মাছ। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে এক বছরের মধ্যে সেই সব গ্রামের বাসিন্দাদের রক্তশূন্যতার সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানা গেছে।
ডঃ চার্লসের মতে, রান্নার সঙ্গে লোহার মাছ মাত্র ১০-১২ মিনিট ফুটিয়ে নিলেই উপকার পাওয়া যায়। এর পর মাছটিকে তুলে নিয়ে একটু লেবুর রস যোগ করতে হবে যা আয়রনের শোষণের জন্য খুবই প্রয়োজন।
লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট’র প্রধান অধ্যাপক ইমেল্ডা বেটসও ডঃ ক্রিস্টোফার চার্লসের এই পদ্ধতির কার্যকারীতা মেনে নিয়েছেন। তবে লোহার মাছের বদলে সমপরিমাণ লোহার টুকরো দিলেও একই ফল মিলবে। কম্বোডিয়ার প্রায় আড়াই হাজার পরিবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সুফল পেয়েছে।