বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড় খুঁড়ে, বনাঞ্চল ধ্বংস করে, বিভিন্ন ছড়া-ঝিরি-খাল থেকে শতাধিক স্পটে চলছে পাথর উত্তোলন। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট মেতে উঠেছে এই পরিবেশ বিধ্বংসী কাজে।
বিগত ও চলতি বছরে কোন ধরনের পাথরের পারমিট দেয়া হয়নি জানিয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম বলেন, পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবেনা। যারা পরিবেশের ক্ষতি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এইসব পয়েন্টে কমপক্ষে দুই লক্ষাধিক ঘনফুট পাথর পাচারের জন্য মজুদ করা হয়েছে। বর্ষায় পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করে আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রাক দিয়ে পাথরগুলো পাচার করা হবে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বনপুর, রামগতি পাড়া, গয়ালমারা, হারগাজা, কাঠাঁলছড়া, ইয়াংছা, ত্রিশডেবা, ছমুখাল, খ্রিষ্টান পাড়া, হরিণঝিরি এলাকা হতে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এইসব এলাকা হতে চকরিয়া ভেন্ডিবাজারের পাথর ব্যবসায়ী মহিম, পালাকাটার এনাম, ভেন্ডিবাজারের সুরুত আলম, নাছিম, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, জামাল উদ্দিন ফকির, লামার প্রদীপ কান্তি দাশের সিন্ডিকেট পাথর আহরণ করছে। কারো পাথর উত্তোলনের সরকারি পারমিট নেই।
গজালিয়া ইউনিয়নের শিলেরঝিরি, মিজঝিরি, সাপমারা ঝিরি, সেবা ঝিরি, দূর্যধন পাড়া, ব্রিকফিল্ড এলাকা হতে প্রচুর পাথর উত্তোলন করছেন চকরিয়ার পাথর ব্যবসায়ী আর্মি মিজান, আকবর, মোহাম্মদ নবী, রিজু সহ অনেকে।
ফাইতং ইউনিয়নের মিজঝিরি, মেয়ন্দা, পাদুর ছড়া, কারিয়াং ঝিরির আগা, শিলের ঝিরি, বরই বাগান এলাকা হতে পাথর ব্যবসায়ী মনসুর আলম, আব্দুল জলিল, মংচানু মার্মা, আকবর, শাহাদাৎ হোসেন, বাবুল, কাজল, আরিফ হোসেন, আর্মি মিজান ও রিজুর লোকজন নির্বিচারে পাথর তুলছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহম্মদ ইউনিয়নের কারিয়াং ঝিরির আগা, শিলের ঝিরি হতে পাথর তুলছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
লামা পৌরসভার সীমানা সংলগ্ন মধুঝিরি, লাইনঝিরি, ছাগলখাইয়া, শিলেরতুয়া, নুনারঝিরি, শিবাতলী, ডাকাইত্যা ঝিরি এলাকা হতে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সরই ইউনিয়নের লুলাইং, লেমুপালং, মেরাইত্তা, লম্বাখোলা এলাকার অসংখ্য ঝিরি খাল হতে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। রুপসীপাড়া ইউনিয়নের বড় কলার ঝিরি, ছোট কলার ঝিরি, ছলুম ঝিরি, মংপ্রু পাড়া, চিংকুম পাড়া এলাকা হতে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
অবাধে পাথর আহরণের বিষয়ে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা ও পরিবেশ কমিটির সভায় গজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মার্মা ও রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিংপ্রু মার্মা বলেন, লামা উপজেলার কোন ঝিরিতে ভাসমান পাথর নেই। পাহাড়ের সব কয়টি ঝিরিতে পানি প্রবাহ কমে গেছে। সামনে শুষ্ক মৌসুম। দুর্গম পাহাড়ের মানুষ পানির অভাবে মারা যাবে। শীঘ্রই পাথর উত্তোলন বন্ধ না করলে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে। তাদের এই বক্তব্যের সাথে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান, অন্যান্য ইউপি চেয়ারম্যানগণ, সাংবাদিক, বন বিভাগের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা সহমত প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় প্রশাসন পাথর ব্যবসায়ীদের কিছু বলছেনা। সবাই নীরবতা পালন করছেন। পাথর আহরণ, পরিবহন ও উত্তোলন করতে গিয়ে প্রভাবশালী মহল পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে। এতে করে কোটি টাকার গ্রামীণ অবকাঠামোর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নষ্ট হয়ে গেছে।
পাথর ব্যবসায়ী আর্মি মিজান বলেন, স্থানীয় প্রশাসন সহ সবাইকে ম্যানেজ করেই আমরা পাথর উত্তোলন করি।
লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, লামা উপজেলার প্রায় সকল ঝিরি ঝর্ণা এখন পাথরশূন্য। এতে করে পানির প্রবাহ কমে গেছে। পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলন পরিবেশের জন্য চরম হুমকি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, খবর পাওয়া মাত্র আমরা পাথর জব্দ করছি। উল্লেখিত স্থান সমূহে শীঘ্রই অভিযান চালানো হবে।
– লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি