রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি।। বান্দরবানের লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে বেড়েই চলেছে অবৈধ পথে পাথর পাচার। আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট অসাধু ব্যবসায়ীরাও হয়ে উঠছে বেপরোয়া। তারা মানছেনা কোন নিয়ম কানুন। এদিকে বে-আইনীভাবে পাথর পাচার বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে মারাত্মকভাবে।
অপরদিকে পাথর পাচারকারীদের চলাফেরা, ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে জনজীবন। পাথর পাচারে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালর্ভাট ভেঙ্গে এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। বে-আইনী ও অনুমোদনহীন এ পাথর পাচারকারীরা ৩০ থেকে ৪০ টি সিন্ডিকেটে বিভক্ত বলে জানা গেছে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে এই সিন্ডিকেট নির্বিচারে পাহাড় কেটে ও পাহাড়ি ঝিরি ঝরনার ক্ষতি করে তুলে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ পাথর।
এদিকে পাথর উত্তোলনের কারণে গ্রীস্ম মৌসুম শুর হতে না হতেই তীব্র পানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে পাহাড়ের র্দুগম এলাকার মানুষ।
ইউনিয়নের ১,২,৩ ও ৯নং ওয়ার্ডের ছমুখাল, পাইকঝিরি, ওয়াক্রা পাড়া, খ্রিস্টান পাড়া, মরা ঝিরি, চচাই পাড়া, কেরানী ঝিরি, কইতরের ঝিরি, বুদুম ঝিরি, চিনির ঝিরি, গয়ালমারা, বালস্ট কারবারী পাড়া ঝিরি, জোয়াকি পাড়া, বাকঁখালী ঝিরি, হরিণ ঝিরি, রবাট কারবারী পাড়া ঝিরি, বালুর ঝিরি, আলিক্ষ্যং ঝিরি, কাঁঠালছড়া ও বদুর ঝিরি হতে পাথর উত্তোলন করছে ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নের বনফুর হতে ইয়াংছা সড়ক, কালিরঝিরি মুখ হতে ঘিলাতলী হয়ে ডুলহাজারা সড়ক ও গয়ালমারা হতে ডুলহাজারা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২০ হতে ১৫০ ট্রাক অবৈধ পাথর পাচার হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে এই প্রতিবেদকসহ সংবাদকর্মীদের একটি দল ট্রাকে পাথর পাচারের বিষয়ে সত্যতা পেয়েছেন। আরো জানা যায়, প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে দিনের চেয়েও রাতের অন্ধকারে বেশি পাথর পাচার হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাকগুলো চলাচল করে। স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলে পাথর ব্যাবসায়ীদের রোষানলে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা।
এসব নদী, খাল, ছড়া ও ঝিরি হতে প্রায় ৬০ জন ব্যবসায়ী পাথর উত্তোলন করে বলে জানায় স্থানীয়রা । অবৈধ পথে পাচারকারী হিসেবে চকরিয়ার মনু মেম্বার, মহিউদ্দিন চৌধুরী, নাছির উদ্দিন, জামাল উদ্দিন ফকির, জমির উদ্দিন ভেন্ডি বাজার), মো. দলিল (পালাকাটা), আবচার উদ্দিন, জকির উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন ড্রাইভার, ছৈয়দ আলম, বেলাল উদ্দিন কোং, শুক্কুর মিস্ত্রি, মো. সোহেল ভুট্টু, আমির হামজা (হাঁসের দিঘি), এখলাস (হাঁসের দিঘি), মুজিব, এনাম, ফাঁসিয়াখালীর হুমায়ন কবির চৌধুরী, চংপাত মুরুং, মো. আক্তার হোসেন (নতুন পাড়া), উসালা মার্মা, ফেরদৌস (ইয়াংছা), ছুট্টুদের দিকেই অভিযোগের তীর স্থানীয়দের।
ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, আমার ইউনিয়নের কোন ঝিরি ছড়াতে ভাসমান পাথর নেই। প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গত ৬/৭ বছর ধরে পাহাড় খুঁড়ে ও মাটি কেটে পাথর উত্তোলন করছে। আমাদের বাধা প্রশাসনসহ কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেনা।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, এখনো কাউকে পাথর তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাছাড়া রাতের আধাঁরে পাথর পাচার হওয়ার বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, জানান ইউএনও।