বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আলমগীর সিকদার হত্যার ঘটনায় তার জনপ্রিয়তা এবং ভূমি বিরোধ এ দুই কারণ দেখছেন স্বজনরা। আগামী ইউপি নির্বাচনে তার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করার সম্ভাব্যতার সাথে যোগ হয়েছে পুরানো ভূমি বিরোধ।
২৩ জুলাই মঙ্গলবার রাত সাড়ে দশটার দিকে খামারবাড়ি থেকে নিজের ঘরে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত আলমগীর সিকদারের ছোট ভাই মোঃ দস্তগীর সিকদার মানিক বলেন, ‘আমার বড় ভাই এলাকায় এখন জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। আগামীতে তার ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার কথা চলছে। এছাড়া সরই আলাদা উপজেলা হলে তার উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচন করার কথা ছিলো। তাই তাকে সরিয়ে নিজেদের রাস্তার পরিস্কার করেছে কেউ কেউ।’
দস্তগীর সিকদার আরো বলেন, ‘আমাদের বিশাল ভূ-সম্পত্তির বিষয়ে কয়েকজনের সাথে বিরোধ রয়েছে। সেটাও খুনের কারণ হতে পারে। আমাদের ধারনা খুনীরা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ছিল। তবে এই হত্যাকান্ডের পেছনে অনেক রাঘব বোয়াল জড়িত থাকতে পারে।’
বুধবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করতে গিয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আলী হোসেন বলেন, ‘লোকালয়ের পাশে এমন ঘটনা দুঃখজনক। তিনি কেন খুন হলেন বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে নিজের নাম একবার মংচিং মারমা অন্যবার মংথোয়াই মারমা বলে জানিয়েছে। তার বাড়ি আলীকদম উপজেলায় বলে জানিয়েছে।’
আলমগীর সিকদারের স্ত্রী পারভীন আক্তার মুন্নী বলেন, ‘এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমার দুই ছেলে ও ১ মেয়েকে যারা এতিম করেছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আহমদ বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টায় আমরা তিনজন ব্যক্তিকে মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। তাদের মধ্যে দুইজনের মাথায় হেলমেট ও অন্ধকার থাকায় কাউকে চিনতে পারিনি। অতি জনপ্রিয়তা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ভূমি বিরোধ তার জন্য কাল হয়েছে।’
সরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মো. কাসেম আলী বিশ্বাস বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা নিহত মোঃ আলমগীরের মোটর সাইকেল ও খুনের কাজে ব্যবহৃত আরেকটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে আমরা আমাদের হেফাজতে রেখেছি। ঘটনাস্থলে পাওয়া খুনের কাজে ব্যবহৃত দুইটি দা আমরা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করেছি।’
লামা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল বলেন, ‘রাতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি। নিহতের পরিবারকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই।’
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ‘খুনের প্রত্যেকটি আলামত ও মোটিভ মাথায় রেখে আমরা তদন্ত করছি। আশা করি খুব শীঘ্রই রহস্য উৎঘাটন করতে সক্ষম হব। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
প্রসঙ্গত, ২৩ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় সরই ইউনিয়নের পূর্ব হাসনাভিটা এলাকার ফাতেমা দরগাহ নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মোঃ আলমগীর সিকদার লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সরই ইউনিয়নের সাবেক ৩ বারের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলী সিকদারের বড় ছেলে। খুনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজ করছে।