মহামারী করোনা প্রতিরোধে সরকার ‘লকডাউন’ ঘোষণা না করে ‘বড় ভুল’ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বুধবার বেলা সোয়া ১২টায় উত্তরার নিজের বাসায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, সরকার তো লকডাউনই ঘোষণা করেনি। তারা বলেছেন সাধারণ ছুটি। যখন সাধারণ ছুটি ঘোষণা হবে তখন তো ছুটির আমেজ আসবে। তখন কেউ কক্সবাজার যায়, কেউ সিলেট যায়, কেউ বাড়ি যায়, কেউ মামার বাড়ি যায়, কেউ নানার বাড়ি যায়। এটাই তো আমাদের দেশের একটা কৃষ্টি বলা যেতে পারে। ওই জায়গায়টাতে সরকার সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছে। তারা কোনো লকডাউন না করে সাধারণ ছুটি দিয়ে দিয়ে এই সমস্যাটা সৃষ্টি করেছে।’’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘‘সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। আপনারা দেখেছেন, কোনো সমন্বয়-সামঞ্জস্য না রেখে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলো তারা খুলে দিল, আবার বন্ধ করল, আবার খুলে দিল। গণপরিবহন দুইদিন চলল। অমানবিকভাবে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-শিশুরা কিভাবে হেঁটে হেঁটে অথবা ট্রাকে গেছেন তা আপনারা দেখেছেন। কোনো সমন্বয় ছিল না বলেই এটা হয়েছে।’’
তিনি বলেন, সরকারের কো-অর্ডিনেশনে অভাব ছিল। তারা স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমনকি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও সেভাবে সমন্বয় করতে তারা পারেননি। যার ফলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সবচেয় বড় সমস্যা হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙেই গেছে। এখনও কোনো হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়াটা খুব দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালের যে অবস্থা সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তো যাচ্ছেনই না। তারা সিএমএইচএ বা অন্যত্র চেষ্টা করছেন।
সরকার কেনো ‘লকডাউন’ ঘোষণা করলেন না- এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘সরকার কেনো লকডাউন ঘোষণা করলেন না সেটা তারা বলতে পারবেন। আমি যেটা মনে করি তাদের অভিজ্ঞতার অভাব, তাদের উদাসীনতা এবং আমি এটাকে ব্যাখ্যাও করতে পারি না যে, কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিলেন। সরকার কি এটা বুঝাতে চেয়েছে যে, আমাদের এখানে সমস্যা নেই। আমরা সাধারণ ছুটি দিয়েছি। লকডাউন কথাটা প্রত্যেকটি দেশ ব্যবহার করেছে, প্রত্যেকটি সরকার ব্যবহার করেছে। এরাও এখানে দুই-একটা জায়গা লকডাউন করেছেন। যেমন- ঢাকায় মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকা করেছে। এভাবে করে তো সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। ভারতে এখন পর্যন্ত লকডাউন চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মনে করি যে, এখানে প্রাথমিকভাবে লকডাউন রেখে যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যেত তাহলে সংক্রমণটা অনেক কম হতো। এখন করোনা সারা বাংলাদেশে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন একটা গ্রাম নেই যেখানে আক্রান্ত হয়নি। পরীক্ষা তো নেই, পরীক্ষা হলেই ধরা পড়ত। আমরা যদি প্রথমেই লকডাউন দিতাম তাহলে এই সংক্রমণ ছড়াত না। লকডাউন তুলে নেয়ার কাজটি যেসব রাষ্ট্র করছে তারা কিছু তিন মাস লকডাউন করে তারপর তা শিথিল করার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি আমাদের দেশে, এই ঘনবসতির দেশে এখানে শক্তভাবে এটাকে বাস্তাবায়িত না করলে এটাকে মোকাবেলা করা খুব কঠিন।’’
তথ্যমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা যে কথাই বলি না কেন তথ্যমন্ত্রী সবসময় তোতাপাখির মতো বলে যাচ্ছেন, আমরা জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সমালোচনা করছি। আমি বলছি যে, বিরোধী দলের কাজ সরকারের কর্মকাণ্ডের ভুলগুলোকে শুধরে দেয়া। আমরা সরকারের ত্রুটিগুলোকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি।’’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘উনি (ওবায়দুল কাদের) সঠিক কথা বলছেন না। আমরা মানুষের পাশে আছি, অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে আছি। আমরা সোয়া কোটি মানুষের কাছে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছি আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ত্রাণ নিয়ে। করোনার প্রথম দিকে আমরা জনসচেতনার জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি, মাস্ক বিতরণ করেছি, বস্তিগুলোতে বেসিন বসিয়ে দিয়েছি, আমরা হাসপাতালগুলোতে পিপিই সরবরাহ করেছি। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য একটা ইকোনমিক প্যাকেজের পরিকল্পনা দিয়েছিলাম উনাকে। তিনি সেটা আমলে নেননি। এইটুকু বলতে পারি, আমরা শুধুমাত্র সমালোচনার জন্য নয়, মানুষকে বাঁচানোর জন্য, সহযোগিতা করার জন্য সরকারের কাছে বারবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। সরকার সেই সহযোগিতা গ্রহণ করেননি।’’
গণস্বাস্থ্য কিট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও তার প্রতিষ্ঠান প্রথম দিকে করোনা কিট উদ্ভাবন করলেন, এখন পর্যন্ত তার অনুমোদন পায়নি। উনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আমি তার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি। সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি যে, অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিটের পরীক্ষা শেষ করে তা ব্যবহার করতে দেয়া হোক। তাতে জনগণ এই রোগ থেকে মুক্তি পাবে।’’