মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন চার লাখ ছাড়িয়েছে।আজ শনিবার পর্যন্ত গত এক মাস ২৫ দিনে চার লাখ পাঁচ হাজার ৮০১ জন রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হয়েছে। আজ একদিনেই নিবন্ধিত হয়েছে ১০ হাজার ৬৭ জন। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং-১, কুতুপালং-২, নোয়াপাড়া, থাইংখালী-১, থাইংখালী-২, বালুখালী ও টেকনাফ উপজেলার লেদা- এই ৭টি মায়ানমার ন্যাশনাল’স বায়োমেট্রিক ক্যাম্পে নিবন্ধনের কাজ চলছে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। রোহিঙ্গারা যেন সারাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেই লক্ষ্যে এই ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছেন।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মোহাম্মদ জাগির আজ সন্ধ্যায় বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হতে পারে। ছবিযুক্ত এই কার্ডের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঠিক পরিসংখ্যান রাখা যেমন সম্ভব, তেমনি বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ সনাক্তকরণ কার্ড তৈরিতে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা যাবে খুব সহজেই। এখনও প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজরের বেশি রোহিঙ্গা নিবন্ধিত হচ্ছে। প্রতিদিন নিবন্ধন কেন্দ্রে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিবন্ধন কর্মীদের দিনভর ছবি তুলে ও তাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।’
শনিবার সকালে কুতুপালং ক্যাম্পের নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য তিন ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রথমে রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্য নেয়া হচ্ছে। এতে থাকছে- নাম, মা-বাবার নাম, দেশ, ধর্ম, লিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্য। এরপর তাদের ছবি তোলা হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে আঙুলের ছাপ। একই সঙ্গে তাদেরকে একটি করে ছবি সম্বলিত নিবন্ধন কার্ড দেয়া হচ্ছে। অনেকটা ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মতো।
নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্যদেশে শরণার্থী জীবনে এসে দেশ-মাতৃকার পরিচয় সম্বলিত একটি কার্ড পেয়ে খুশি রোহিঙ্গারা। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে হাতে হলুদ ফিতায় ঝোলানো নিবন্ধন কার্ড নিয়ে বেরিয়ে আসা ফাতেমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেলো।
ফাতেমা জানান, ‘বার্মার মংডুতে আমরা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। আমার স্বামীকে সেনাবাহিনী মেরে ফেলেছে। তিন সন্তান নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে, খাদ্য দিয়েছে। আজকে ছবি তুললাম। এই কার্ড থাকলে নাকি আমরা রিলিফ পাবো। কষ্ট নিয়েও আমরা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় ভালোই আছি।’
সকাল ১১টার দিকে স্ত্রী ও ৫ সন্তানকে নিয়ে বালুখালী ক্যাম্পের নিবন্ধন কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ছলিম উদ্দিন। তিনি জানান, ‘ছবি না তুললে নাকি কোন ত্রাণ পাবো না। আমাদের ক্যাম্পের অনেকেই নিবন্ধন করেছেন। তাই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের জন্য অনেক করেছে। খাদ্য, ঔষধ, থাকার ব্যবস্থা সব করছে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্ট মোতাবেক ২৫ আগস্টের পর থেকে শনিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ৬ লাখ ২১ হাজার। সেই হিসেবে আরো ২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা এখনও নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। বাসস