বাজারে কোমল পানীয়র পাশাপাশি এনার্জি ড্রিংকস (শক্তিবর্ধক পানীয়) তরুণদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে এর বেশকিছু ক্ষতিকর দিক থাকায় এ ধরনের পানীয়কে নিরুত্সাহিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোমল পানীয় থেকে আলাদা করে এনার্জি ড্রিংকসের উপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে।
বর্তমানে কোমল পানীয়র উপর ২৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক থাকলেও এনার্জি ড্রিংকসের উপর রয়েছে ৩৫ শতাংশ হারে। তবে বর্ধিত এ শুল্ক ফাঁকি দিতে এসব এনার্জি ড্রিংকস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই তা কোমল পানীয় নামে বিপণন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এনার্জি ড্রিংকস ও কোমল পানীয়র মধ্যে ব্যবহূত ক্যাফেইনে কিলোক্যালরির মাত্রা ঠিক করে দিলেও তা বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। ফলে এ প্রক্রিয়ায় শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছে এনবিআর। এ পরিস্থিতিতে সঠিক রাজস্ব আহরণের স্বার্থে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজসহ সব ধরনের বেভারেজ পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণের লক্ষ্যে বিএসটিআইর (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) সহযোগিতা চেয়েছে এনবিআর। এ বিষয়ে জরুরি কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে গতকাল এনবিআরের ভ্যাট নীতি বিভাগ বিএসটিআইর মহাপরিচালককে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এনার্জি ড্রিংকসসহ কোমল পানীয়র বাজার প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সরকার এ খাত থেকে ৮৭৯ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। এর আগের অর্থ বছরে ৭৯৮ কোটি ও তার আগের অর্থ বছরে এই রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৭৮০ কোটি টাকা। অর্থাত্ প্রতিবছরই এ ধরনের পানীয়র বাজার বাড়ছে। তবে বাজারে বেশকিছু এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হলেও তা মূলত কোমল পানীয় নামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, এ প্রক্রিয়ায় অন্তত ৫শ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। বিএসটিআই মান নির্ধারণ করে দিলে এ খাত থেকে চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বিএসটিআইতে পাঠানো এনবিআরের ওই চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস ও মল্ট বেভারেজ জাতীয় পানীয়সমূহ বিভিন্ন মূল্যে বিক্রয় করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস জাতীয় পণ্যসমূহকে ভিন্নভাবে ভোক্তা সাধারণের কাছে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে; কিন্তু মান নির্ধারণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিএসটিআই এসব পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণ না করায় সাধারণ ভোক্তারা যেমন প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আহরণও নানাবিধ ঝুঁকি ও আইনি জটিলতার সম্মুখীন হয়। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংকস, মল্ট বেভারেজসহ সকল বেভারেজ পণ্যের সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করা জরুরি, যার ভিত্তিতে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায় করা যাবে।
জানা গেছে, এর আগেও বিএসটিআইকে এ বিষয়ে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল এনবিআর। বিএসটিআই জবাবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো মানদণ্ড করা নেই এবং তাদের কিছু করণীয় নেই বলার পর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ উদ্যোগী হয়। এর পর বাজারে এনার্জি ড্রিংকস হিসেবে পরিচিত কিছু পানীয়র নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে। তাতে দেখা যায়- ১শ মিলি লিটার পানীয়র ক্যাফেইনে সর্বনিম্ন কিলোক্যালরি ৬০। এটিকে ভিত্তি ধরেই এনবিআর মানদণ্ড ঠিক করে দেয়। তবে এর পর বেশিরভাগ এনার্জি ড্রিংকসই কোমল পানীয় নামে বিপণন হতে শুরু করে; কিন্তু মানদণ্ড নির্ধারণকারী সংস্থা বিএসটিআই হওয়ায় এটি কার্যকরে আইনি জটিলতা দেখা দেয়। এর পরই বিএসটিআইকে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য চিঠি পাঠায় এনবিআর।
এদিকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন (এনার্জি ড্রিংকস) সমৃদ্ধ পানীয় (প্রতি লিটারে ১৪৫ মিলিগ্রামের বেশি) বিপণন নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কোমল পানীয়র মোড়কে ‘এনার্জি ড্রিংকস’ শব্দ ব্যবহার করা যাবে না এবং আমদানিকালে তা উপযুক্ত পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষা করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এটি অমান্য করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড কিংবা ২০ লাখ টাকা জরিমানার কথাও বলা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
সৌজন্যে ঃ দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন।