গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার পরও এ ব্যাপারে প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র-যুব ও নারী সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী চার সংগঠন।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভানেত্রী কণিকা দেওয়ান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নীতি চাকমা ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামে Tazul islam (tazul4595) নামের আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়, পরে সেখান থেকে স্ক্রিনরেকর্ড ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় দিন দুপুরে ভারী অস্ত্র হাতে একদল যুবক একটি পুলিশ ভ্যানের পাশ ও সামনে দিয়ে লাইন করে হেঁটে যাচ্ছে, আর এ সময় উক্ত ভ্যানে (গাড়ির নম্বর ‘জেলা পুলিশ, রাঙ্গা-১০’) থাকা এক পুলিশ সদস্য হেসে হেসে এই দৃশ্যটি ভিডিও ধারণ করছেন। এছাড়া ভিডিওটিতে পুলিশের গাড়িতে থাকা একজনকে ছাতা মাথায় দিয়ে হেঁটে যাওয়া সন্ত্রাসীকে সালাম দিতেও শোনা যায়। ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উক্ত ভিডিওতে প্রদর্শিত মহড়ার স্থানটি রাঙামাটি সদর উপজেলাধীন আসামবস্তির কাপ্তাই সড়কের বড়াদাম এলাকায় বলে জানা গেছে, যা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র আস্তানা বলে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।’
নেতৃবন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্মকর্তারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে তাদের জিরো ট্লারেন্স নীতি থাকার কথা প্রায় সময় বলে থাকেন। কিন্তু রাঙামাটিতে পুলিশের সহাস্য উপস্থিতিতে দিন দুপরে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া চলার ৫ দিন অতিক্রম হতে চললেও এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কিংবা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কোন পদক্ষেপ কিংবা প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্য আমরা এখনও দেখতে পাইনি, যা উক্ত সন্ত্রাসীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের সম্পর্কের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
প্রশাসনের কোন কোন মহলের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া রাঙামাটি শহরে কোন সন্ত্রাসী বাহিনীর পক্ষে এভাবে প্রকাশ্য মহড়া দেয়া সম্ভব নয় বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেন।
তারা আরো বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বিকালে বান্দরবান জেলা শহরের উজানি পাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথাকথিত মগ পার্টি নামে একটি সশস্ত্র দল ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধেও কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন যে, তিনি সন্ত্রাসীদের অবস্থানের বিষয়ে বান্দরবান পুলিশ সুপারকে অবহিত করে তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তারপরও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এসব ঘটনায় প্রমাণ হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশাসনের একটি অংশ ‘জেএসএস‘ ও ‘জুম্ম রাজাকারদের‘ গুটি হিসেবে ব্যবহার করে এই অঞ্চলকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতে একটি সুগভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে পুলিশের সামনে প্রকাশ্য সশস্ত্র মহড়ায় অংশ নেয়া জেএসএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ঠ্যাঙারে বাহিনীর ব্যবহার, মদদ দান ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এছাড়া প্রকাশ্যে পুলিশের নাকের ডগায় সন্ত্রাসীদের বিচরণ ও অবস্থান সত্ত্বেও কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনরূপ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি সে বিষয়ে রাঙামাটি ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কৈফিয়ত চাওয়া ও তাদের অপসারণের জন্য সরকারের কাছে তারা দাবি জানান। সূত্র: প্রেস বিজ্ঞপ্তি