সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই এখন সামনে চলে আসছে একাধিক অনলাইন শপের ওয়েবসাইট, যারা কেউ ২১ টাকায় দিচ্ছে মোটরসাইকেল, মাত্র ১০০ টাকায় অফার করছে মোবাইল ফোন। পণ্য বিক্রির এ ধরনের লোভনীয় অফারে অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন। সে সুযোগে একটি চক্র প্রতারণার জাল বিস্তার করছে অন্তর্জালে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ‘ইজেলো’ নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান (অনলাইন শপ) সম্প্রতি ২১ টাকায় মোটরসাইকেল বিক্রির অফার দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি নাম হচ্ছে ক্ষেতখামার। অর্গানিক পণ্য বিক্রির সময় প্রতিষ্ঠানটি এই নামটি ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইজেলোর এই অফার নিয়ে চলছে ধুন্ধুমার কান্ড। অনেকেই লোভে পড়ে ২১ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেলের অর্ডার দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার এই অফারটি যে প্রতারণার কৌশল সে বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবপেইজে কমেন্ট করে ভোক্তাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। তবে এই সতর্কবার্তায় খুব একটা পাত্তা দিচ্ছেন না ক্রেতারা। তারা ২১ টাকার মায়া ছেড়ে দিয়ে লাখ টাকার মোটরসাইকেলের মায়ায় মত্ত।
ইজেলোর এই মোটরবাইক অফার সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির কাস্টমার কেয়ার নম্বর ৮৮০৯৬০৬৬৬৭৭১১-এ বারবার ফোন করার পরও রিং ঢোকেনি। তবে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে পণ্য বিক্রির লাইভ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আনিতা অনিক ভোক্তাদের প্রশ্নের জবাবে জানান, মোটরসাইকেলের এই অফারটি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ সময়ে সারা দেশে যত সংখ্যক ক্রেতাই ২১ টাকা পরিশোধ করে পণ্যটির অর্ডার দিক নো কেন, তার থেকে মাত্র একজনকে বেছে নিয়ে মোটরবাইক দেওয়া হবে। বাকিদের পরিশোধিত টাকা তাদের ইজেলো ওয়ালেটে জমা হয়ে যাবে অথবা যে যে মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছেন সেই মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে।
ফারদিন নামে এক ভোক্তা জানান, এই অফারটিতে সাড়া দিয়ে সারা দেশে যদি ১ লাখ ক্রেতাও ২১ টাকা পরিশোধ করে অর্ডার দেয়, তবে এর পরিমাণ হবে ২১ লাখ টাকা। বিপরীতে একটি মোটরসাইকেল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিলেও বাকি প্রায় ১৯ থেকে ২০ লাখ টাকা এই একটি অফারে মেরে দেওয়া সম্ভব। মজার বিষয় হচ্ছে, এই একই প্রতিষ্ঠান ২১ টাকায় মোটরসাইকেল বিক্রি করলেও একটি হেলমেটের মূল্য দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ২০০ টাকা। তবে এই অফারেও রয়েছে ৮০ শতাংশ ক্যাশব্যাক। শুধু যে মোটরসাইকেলে প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের চটকদার অফার চলছে তা নয়, একইভাবে ১ হাজার ১০০ টাকার বারফোন দিচ্ছে ১০০ টাকায়। ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই অফারটি চলবে। এই অফারের নিচে খোরশেদ শাহীন আলম একজন লিখেছেন, ‘১০০ টাকা ফেরতের আশা না করে পেমেন্ট করতে হবে, বিফলে মূল্য ফেরত নাই।’ এই অফারেও যত ক্রেতাই অর্ডার দিক না কেন তারা ৫০০ জনকে পণ্য সরবরাহ করবে। এরপর বাকিদের রিফান্ড করবে। তবে এই রিফান্ড বিকাশ কিংবা নগদে হবে না। এটা তাদের ইজেলো বা ক্ষেতখামারের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যা নগদায়নের কোনো সুযোগ নেই। কেবল আরেক পণ্যের অর্ডার দেওয়া যাবে। কয়েকজন অফার লিস্টে কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন, কেন বিকাশ বা নগদে রিফান্ড করা হবে না। উত্তরে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এটি তাদের অফারের শর্ত। শুধু ইজেলো বা ক্ষেতখামার নয়, একইভাবে ‘ভালো শপ’ নামে আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ১০১ টাকায় নোকিয়া মোবাইল ফোন বিক্রির অফার ছেড়েছে অন্তর্জালে। শিহাব নামে এক অনলাইন ক্রেতা জানান, তিনি এ ধরনের অফারে সাড়া দিয়ে একাধিকবার প্রতারিত হয়েছেন। পরিশোধিত টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও সেটি ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি ঝামেলাপূর্ণ। হতাশা প্রকাশ করে শিহাব বলেন, শর্ত দিয়ে এ ধরনের চটকদার অফারের মাধ্যমে মূলত অনলাইন শপিংয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়। এগুলো মূলত এক ধরনের অনলাইন লটারি। ই-কমার্স নীতিমালা না থাকার ফলে ভোক্তাদের ঠকানোর কাজটি খুব সহজেই করে পার পেয়ে যায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন কি প্রতিষ্ঠানগুলো হেল্পলাইনের যে নম্বরটি দেয়, সেগুলোতেও ফোন দিয়ে সংযোগ পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও বিভাগের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা ঠেকাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। খসড়া নীতিমালায় অনলাইন লটারির বিষয়টি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।