মেলায় এসেছে ভিন্নমাত্রার গদ্যের বই ‘মনসুখিয়া’। প্রকাশক স্বরচিহ্ন। প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু। আবু সাঈদ আহমেদের লেখা বইটি পড়ার পর লেখক সালাহউদ্দিন শুভ্র বলছেন- ‘মনসুখিয়া’ কোনো গল্পের বই নয় আবার গল্পের বইও। এটি এমনকি নাটকের বই বলেও পাঠকের মনে হবে। একের পর এক পর্ব, দৃশ্য, কথামালা এসে হাজির হয়। কথা বলে জড় ও জীব উভয়েই। জড়েরা এবং অন্যান্য প্রাণীরা প্রশ্ন করে মানুষকে। তারা কেন মানুষ, কী জন্য মানুষ, তাদের এত অস্থিরতা কেন, এত পলায়নপরতা কেন? তারা যেখানে থাকার কথা সেখানে ঠিকমতো আছে তো?
এরকম খুনসুঁটি, তর্ক, অভিমান, কথার পিঠে কথার মধ্য দিয়ে অনেকগুলো অধ্যায় নিয়ে ‘মনসুখিয়া’ পাঠককে অনুভূতিময় এক জায়গায় নিয়ে যাবে। যে জায়গার প্রস্তাব আবু সাঈদ আহমেদ দিতে চেয়েছেন এ বইয়ে। প্রকৃতপক্ষে তার বইটি নিজেই সেই গন্তব্য হয়ে ওঠে। আধুনিক, রোমান্টিক, ভালো থাকতে চাওয়া মানুষরা যেখানে যেতে চায়, গদ্যের মায়ায় তাদের তিনি সেই জায়গায় নিয়ে যান।
কিন্তু এই যাওয়া অরাজনৈতিক নয়, স্বার্থপর যাওয়া নয়। এই যাত্রায় রাজনীতি থাকবে। কমিটমেন্ট থাকবে, যা হওয়ার কথা ছিল তা কেন হলো না সেই জানতে চাওয়া থাকবে। যে দায়িত্ববোধ থাকার কথা তা কেন নাই, সেই প্রশ্নও বাদ যাবে না।
কেন প্রেম হলো না নটরডেমের সঙ্গে ভিকারুননিসার। সেই যে ছুটে গেল প্রেম, বাল্যের প্রেম- তা কি একেবারেই গেল? কিছুই কি এর রইল না বাকি? বাস্তবতা হচ্ছে তা থেকেই যায় মনে মনে। এই মনের আলাপ নিয়েই বইটি। কনফেশনে ফেলে দিচ্ছেন এখনকার সময় ও পাঠককে আবু সাঈদ আহমেদ।
যেসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে বলে ভাবছি আমরা, সেসব প্রশ্নের উত্তর তো আসলে এড়াতে পারছি না। বিবেকের দংশনে তাই আমাদের ঘুম হয় না, মনে, পেটে, বুকে অশান্তি। ঘরের আড় থেকে, ছাদ থেকে, আশপাশের জড় সব বস্তু থেকে জানতে চাওয়া কি হয় না? নিজের মনে একবারের জন্যও কি উকিঁ দেয় না এসব জিজ্ঞাসা।
দেয় না বলে আমরা আছি এক গভীর সংকটের সময়ে। আর যাদের মনে পীড়া দেয় সুন্দরবন বাঁচাতে না পারা, ভোট বাঁচাতে না পারা- ইত্যাদি, তাদের মনোযন্ত্রণার কথা লিখেছেন আবু সাঈদ আহমেদ। তাদের জন্য এক মনসুখিয়া গড়ে তুলেছেন তিনি। তাদের জন্য মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতো এক ‘ময়নার দ্বীপ’ দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। মাঝি হয়ে আধুনিক, মানবিক ও জাগ্রত বিবেকের নাগরিকদের তিনি নিয়ে যেতে চান সেই মনসুখিয়ায়।
সেই ফ্যান্টাসটিক জায়গাটির বাস আবার শরীরের বাইরে নয়, শরীরেই, মনের সুখের জন্য যা তা মনসুখিয়া। মনের সুখ মানে অন্যের ক্ষতি নয়, অনিষ্ট নয়, মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া নয়। মনসুখিয়া কী তা জানতে লেখকের বইটি পড়া আবশ্যক।
আবু সাঈদ আহমেদ রসবোধের মানুষ। পলে পলে তার রস পাঠকের সামনে উন্মোচিত হবে। সুক্ষ্ম হাসির ছটা তার বইটিকে করেছে প্রাণবন্ত। অনর্গল কথা বলে গেছে চরিত্ররা। নিজের মধ্যেই নিজেরা যেন। তার কথাগুলো যেন নিজের সঙ্গে নিজের, স্বগোতক্তি।
আবু সাঈদ আহমেদের হাত ধরে আধুনিক উপকথা ফিরে এল বাংলায়। কথা বলতে লাগল ক্ষুদে প্রাণীরা। তারা জিজ্ঞাসার মধ্যে ফেলে দিল মানুষকে, অনুশোচনা আর দুঃখবোধ জাগিয়ে তুলতে লাগল।
বইটি তাই অনেক দিক দিয়ে পাঠককে সজাগ করবে। নতুন ধরনের পড়ার এক স্বাদ দেবে। জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তার বইটির বিক্রিও ভালো হবে নিশ্চয়।’
বইটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা। কমিশন বাদে ১২০ টাকা। পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলার প্রকাশ, স্টল ৪২৮ এবং রাইটার্স গিল্ড, স্টল ২৮৯-এ।