বিভিন্ন দেশের পাসপোর্টের মূল্যায়ন সূচক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে। আগে ছিল ৯০তম স্থানে, এখন ৯৭তম নেমে এসেছে। অর্থাৎ বলা যায়, বাংলাদেশি পাসপোর্টের মূল্যায়ন ওজন কমেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে একই সূচকে আছে লেবানন, ইরান, কসোভো।
সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট জাপান ও সিঙ্গাপুরের। দুর্বলতম পাসপোর্টের দেশ বোমা হামলায় জর্জরিত আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের অবস্থান ১০৫তম। জাপান ও সিঙ্গাপুরের কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি আছে, যা দিয়ে চমৎকারভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে দেশ দুটো। এ জন্যই তাদের পাসপোর্ট অন্য অনেকে দেশের চেয়ে ওজনদার।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা দ্য হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স বিশ্বের ২০০টি দেশের ওপর পরিচালিত সূচকে দেশগুলো ১০৫তম পর্যন্ত মান বা অবস্থান নির্ধারণ করেছে। বিশ্বে ভিসামুক্ত চলাচল স্বাধীনতার ওপর গবেষণা করে প্রতিবছর এ সূচক প্রকাশ করে আসছে দ্য হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স। গত মাসের ১৩ ফেব্রুয়ারি এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) ভ্রমণ তথ্যভান্ডারের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনার্স সর্বশেষ এ সূচক তৈরি করেছে। দেশওয়ারি নম্বর (স্কোর) দেওয়া রয়েছে সূচকে। এ নম্বরটি হচ্ছে, একটি দেশ আগে থেকে ভিসা ছাড়াই অর্থাৎ আগমনী ভিসা নিয়ে বিশ্বের কতটি দেশে যেতে পারেন, তার ওপর নির্ভর করে।
আগমনী ভিসা নিয়ে মাত্র ২৪টি দেশে যেতে পারে বিধায় বিশ্বের সবচেয়ে কম দামি পাসপোর্টধারী দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের ঠিক ওপরেই আছে ইরাক, ১০৪তম স্থানে। ভিসা ছাড়াই ২৭টি দেশে যেতে পারেন একসময়ের সাদ্দাম হোসেনের দেশ ইরাকের মানুষ। গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সিরিয়ার (১০৩তম) মানুষ বিশ্বের ২৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। শেষ থেকে চার নম্বরে আছে পাকিস্তান। ১০২ স্কোর পাওয়া পাকিস্তানের লোকজন ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন ৩০টি দেশে।
ভিসা ফি ছাড়াই বাংলাদেশিরা যেতে পারেন
শ্রীলঙ্কা, বাহামা, বার্বাডোজ, ভুটান, ডোমিনিকা, ফিজি, গাম্বিয়া, গ্রেনাডা, হাইতি, ইন্দোনেশিয়া, জ্যামাইকা, লেসেথো, মাইক্রোনেশিয়া, সেন্ট কিট অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট. ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাউন দ্বীপপুঞ্জ, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ও ভানুয়াতু।
ভিসা অন অ্যারাইভাল পান বাংলাদেশি
নেপাল, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে, কমরোস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, গিনি বিসাও, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, মৌরিতানিয়া, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া, সামোয়া, সিশিলি, পূর্ব তিমুর, টোগো, ট্যুভালু, উগান্ডা, সিরিয়া।
বাংলাদেশি পাসপোর্ট এখনো কম দামি
হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনারসের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মানুষ আগমনী ভিসা নিয়ে বিশ্বের ৩৮টি দেশে যেতে পারেন।
বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ পাসপোর্টের মূল্য খুবই কম। পর্যটক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ আগে থেকে ভিসা না নিয়ে ঢুকতে পারে বিশ্বের মাত্র পাঁচটি দেশে। দেশগুলো এশিয়া মহাদেশের। এগুলোর মধ্য দক্ষিণ এশিয়ার এবং সার্কের সদস্য চার দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ। বাকি দেশটি ইন্দোনেশিয়া।
শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী পর্যটকদের তাদের দেশের বিমানবন্দরে আগমনী (অন অ্যারাইভাল) ভিসা দেয় ৩০ দিনের জন্য। এ ছাড়া মালদ্বীপ ৯০ দিনের এবং ভুটান ১৫ দিনের ভিসা দেয়।
দ্বিপক্ষীয় ভিসা চুক্তির আওতায় কূটনৈতিক ও অফিশিয়াল পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরা এই পাঁচটিসহ বিশ্বের মোট ২১টি দেশে যেতে পারেন। দেশগুলো হলো ভারত, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, চীন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, বেলারুশ, কুয়েত, রাশিয়া, জাপান ও চিলি।
কূটনৈতিক ও দাপ্তরিক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিরা ভিসা ছাড়া ইউরোপের তিনটি দেশ—রাশিয়া, বেলারুশ ও তুরস্কে ঢুকতে পারবেন। একই সঙ্গে তাঁরা যেতে পারবেন দক্ষিণ আমেরিকায় চিলিতে। রাশিয়া ৩০ দিন ও অন্য তিন দেশ সর্বোচ্চ ৩০ মাসের জন্য আগমনী ভিসা দেয়। জাপান অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের ঢুকতে দেয় না তবে ৯০ দিনের জন্য ঢুকতে দেয় শুধু কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিদের।
যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই, যেসব দেশ থেকে যাঁরা বাংলাদেশে আসবেন এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাস, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কর্মকর্তারাও আগমনী ভিসা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিক, তাঁদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদেরও দেওয়া হয় এ ভিসা।
শীর্ষ ২৪ দেশ
হ্যানলি অ্যান্ড পার্টনারসের সূচকে জাপান ও সিঙ্গাপুরের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী ও দামি পাসপোর্ট জার্মানির। আঙ্গেলা ম্যার্কেলের দেশের মানুষ ভিসা ছাড়াই ১৭৯ দেশে যেতে পারেন। তালিকা তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে আছে ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। এই কয়েকটি দেশের মানুষ ভিসা ছাড়াই বিশ্বের ১৭৮ দেশে ঘোরাফেরা করতে পারেন।
যুক্তরাজ্যে, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ১৭৭ দেশে যেতে পারেন। তালিকার চতুর্থ অবস্থানে আছে এসব দেশ।
পঞ্চম অবস্থানে জাস্টিন ট্রুডোর কানাডা, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র।