মিয়ানমারের চিন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষের কারণে আতঙ্কে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইছেন সে দেশের শতাধিক বাসিন্দা। রোববার বিকেল থেকে তারা বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চাইংক্ষ্যং পাড়ার কাছে অবস্থান নিয়েছেন। পালিয়ে আসা লোকজনের মধ্যে রাখাইন, খেয়াং, বম এবং খুমি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী চাইংক্ষ্যং পাড়ার বাসিন্দা অংহ্লা মারমা জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাদের পাড়ার সীমান্তবর্তী ৭২নং পিলারের কাছে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে তারা অস্থায়ী ছাউনিতে অবস্থান করছে। ওখানে প্রায় এক থেকে দেড়শ’ লোক হতে পারে। মিয়ানমারের চিন রাজ্যের প্লাটোয়া জেলায় গত কিছুদিন ধরে আরাকানের স্বাধীনতাকামী দল ‘আরাকান আর্মি’র সাথে সেই দেশের সেনাবাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে আমরা শুনেছি। সে কারণেই এসব লোকজন আতঙ্কে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে।
রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিরা বম জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের চিন রাজ্যের কিছু এলাকায় সে দেশের সেনাবাহিনীর সাথে বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির গোলাগুলি হয়েছে বলে শুনেছি। বিশেষ করে খমংওয়া এবং ক্যান্টালিন এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে বলে খবর এসেছে। এতে ওখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পালিয়ে এদিকে আসার চেষ্টা করছে। তারা এখন বাংলাদেশের সীমান্তের মিয়ানমার অংশে তাইদং এলাকায় অবস্থান করছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের সীমান্তে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি’র বান্দরবান সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল জহিরুল ইসলাম। তিনি জানান, তারা যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্যে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম জানান, মিয়ানমার থেকে কিছু লোকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে- এমন খবর আমরাও পেয়েছি। তবে এলাকাগুলো এতোই দূর্গম যে, ওখান থেকে সঠিক খবর পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য। বিজিবি যেহেতু সীমান্তে আছে, আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ডিসেম্বরে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে পরিচিত ‘আরাকান আর্মি’র সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ হাজার মিয়ানমার নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যমের দেওয়া খবরে জানা যায়, সোমবার দেশটির সরকার আরাকান আর্মির সদস্যদের খুঁজে বের করতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশির নির্দেশ দিয়েছে। সেনা, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ একটি বিশেষ বাহিনী এই তল্লাশি চালাবে।
এর আগে গত ৪ জানুয়ারি আরাকান আর্মির হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয় বলে মিয়ানমার সরকার জানায়।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে একইভাবে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সংঘর্ষের অভিযোগ তুলে অভিযানে নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে, তাদের হত্যা ও ধর্ষণ করে এলাকা ছাড়া করে। যার ফলে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।