খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিপ্রায়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার সকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দফতরের একজন ডেস্ক অফিসারের সাথে এ বৈঠক হয়। এ সময় বাংলাদেশের ‘বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-অপশাসনের ফিরিস্তি’ উপস্থাপনের পর আসন্ন নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ লোকজনের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সহায়তা চান মির্জা ফখরুল।
এ বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র এদিন বিকালে এই সংবাদদাতাকে জানান, ‘আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতায় সবসময়ই বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।’ এর বেশি আর কোন তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওই মুখপাত্র।
অপর একটি সূত্র নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, বর্তমান সরকারের বৈরী আচরণের শিকার হয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হয়েছে, সারাদেশে বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং অনেক নেতা গুম হয়েছেন বলেও মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেছেন। ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না’ বলেও মির্জা ফখরুল উল্লেখ করেছেন। বৈঠকে বিএনপি নেতা তাবিথ আওয়াল এবং হুমায়ূন কবীরও ছিলেন। মির্জা ফখরুলের দেয়া ডক্যুমেন্টগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গোচরে আনা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর আগের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সহকারি মহাসচিব (রাজনীতি) মিরোস্লাভ জেনকার সাথে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। এসময় বাংলাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের দমন-পীড়নের কিছু ডক্যুমেন্টও হস্তান্তর করেন তিনি। সে সময়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবেদনও জানান মির্জা ফখরুল।
প্রসঙ্গত, গত মাসে বিএনপির পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি লবিং ফার্ম ভাড়া করা হয়েছে। সেই ফার্মের তৎপরতার প্রকাশ ঘটলো জাতিসংঘে মির্জা ফখরুলের বৈঠকের পরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের মধ্য দিয়ে। এ বৈঠকও বিএনপির অনুরোধেই হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী, উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার দেখা পাননি মির্জা ফখরুল। এখানেও বিএনপির যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত কাউকে সাথে রাখা হয়নি। অনেকে চেষ্টা করেও মির্জা ফখরুলের সাথে দলীয় বৈঠকের সুযোগ পাননি। এ নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রবাসের বিএনপি পরিবারে।
অপরদিকে, গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে আসবেন। তার সফরের প্রাক্কালে জামায়াত-শিবিরের মদদে বিএনপি যাতে কোন ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে আওয়ামী পরিবারের সকলে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় রয়েছে। এজন্যই মির্জা ফখরুল অত্যন্ত গোপনে সরকার তথা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বৈঠকের প্রয়াস নেন।’
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ওয়াশিংটন ডিসি ত্যাগ করেছেন।