মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকদেরও সর্বোচ্চ সাজা: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। -ফাইল ফটো

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের নতুন আইনে পৃষ্ঠপোষকদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হবে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান আইনে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থাকলেও পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম। তাই মাদক ব্যবসায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডরা সহজেই পার পেয়ে যায়।

বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ অনুযায়ী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তির দখল বা কর্তৃত্বে বা অধিকারে মাদকদ্রব্য পাওয়া না গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম। মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকারী ও মাদকের গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। সংশোধিত আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ও গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব করা হবে।

এ ছাড়া এই আইনে মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও আইনের আওতায় আনতে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ তদন্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মাদকদ্রব্য ও মাদকের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধে মাদক চোরাকারবারী, ব্যবসায়ী, মাদকসেবী, মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদক সংশ্নিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। যানবাহন ও মাদক স্পটগুলোয় তল্লাশি অভিযান চলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৮ মে থেকে এ পর্যন্ত চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং এগুলো পরিবহনের বাহন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মাদকদ্রব্য সংশ্নিষ্ট ১৫ হাজার ৩৩৩টি মামলা করা হয়েছে। মোট ২০ হাজার ৭৬৭ আসামিকে গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০-এর অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পৃথক আদালত গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাদক অপরাধীদের তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া হচ্ছে। মাদক অপরাধ সংক্রান্ত মামলার বিচার কার্যক্রম আলাদা কোনো আদালতের মাধ্যমে পরিচালনার বিষয়টি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখছে।

সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সেই নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করছে। ২০১৭ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব সংস্থা এক লাখ ৩২ হাজার ৮৮৩ জন মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এক লাখ ছয় হাজার ৫৩৬টি মামলা করেছে।

সংসদ নেতা বলেন, মাদক সমস্য নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে নিয়মিত ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচার রোধে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে তিনটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি সভাতেই মিয়ানমারকে ইয়াবার উৎপাদন ও প্রবাহ বন্ধ করতে এবং মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা তৈরির কারখানা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে ডিসি-ডিএম পর্যায়ে সভা করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ৯৪ জনবলের বিশেষ জোন স্থাপন ও বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন