আল-মামুন, খাগড়াছড়ি ॥ কয়েকটি আলমিরা আর তাকে থরে থরে সাজানো আছে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি। হাত বাড়ালেই মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মিলছে রেকর্ড সংশোধন বই থেকে শুরু করে নামজারি মামলার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল। যা ক’দিন আগেও ছিল শুধুই কল্পনা।
কয়দিন আগেও রেকর্ডরুম মানেই স্যাতস্যাতে ছোট্ট একটি কক্ষ। নথি পাওয়া নিয়ে ছিল দীর্ঘসূত্রিতা। একটি নথি পেতে দিনের পর দিন লেগে যেতো। ১০ ফুট বাই ৮ ফুট ছোট্ট রুমের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতো গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আবার মেঝেতে পড়ে থাকা নথিপত্রের উপর ছাদ থেকে খসে খসে পড়ছে প্লাস্টার। তেলাপোকা ছুটোছুটি করছে কক্ষটি জুড়ে। নথি পাওয়া বা একটি রেকর্ড সংশোধনের জন্য সেবাগ্রহীতাদের ঘুরতে হতো দিনের পর দিন। দুই মাস আগেও মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের চিত্র ছিল এমনই। মাটিরাঙ্গা ভুমি অফিসকে বলা হতো ‘অব্যবস্থাপনার তীর্থভূমি’।
৩৩ বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভুমি) হিসেবে যোগদানের কয়েকদিনের মধ্যেই বদলে গেছে মাটিরাঙ্গা ভুমি অফিসের রেকর্ডরুমের দৃশ্যপট।
আলাপকালে মোহাম্মাদ আলী জানান, এখানে যোগদানের পরপরই রেকর্ডরুমে নথি হাল দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। তখনই নথি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তনের চিন্তা করেন। যেমন চিন্তা তেমনই কাজ। তার উদ্যোগে মাত্র কয়েকদিনে বদলে গেছে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসের নথি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সার্বিক চিত্র।
এখন গুরুত্বপুর্ণ নথিগুলো বছর ও কেস নম্বর অনুযায়ী সাজানো হয়েছে। এখন আবেদন করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া যাবে গুরুত্বপুর্ণ নথি এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে মাটিরাঙ্গা ভূমি অফিসে রেকর্ডরুম ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার চালু করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সমৃদ্ধ করতে নথি ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, রেকর্ড সংরক্ষণ ভুমি অফিসের অন্যতম কাজ। তবে জনবান্ধব ভূমি অফিস প্রতিষ্ঠায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা ভুমি অফিসের অফিস সহকারি মোহাম্মদ ইউনুছ আলী মোল্লা বলেন, সিস্টেম লসের কারণেই এ রকমটা হয়েছে। হাজার হাজার নথি ছোট একটি রুমে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে। একটি নথি খুঁজে পেতে দিনের পর দিন লেগে যেতো। ফলে যথাসময়ে সেবা প্রাপ্তি ব্যাহত হতো। এসি ল্যান্ড যোগদানের পরপরই স্যারের উদ্যোগের ফলে নথি ব্যস্থাপনায় গতি ফিরেছে। এখন আর জনভোগান্তি থাকবেনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ আলী মাটিরাঙ্গায় যোগদানের দুই মাসের মাথায় স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে ধুলো ময়লায় ঢেকে থাকা ফাইলগুলোতে পরিচ্ছন্নতার ছাপ লেগেছে। ভবিষ্যতে ভুমি অফিসের সকল কর্মকান্ডে গতি ফিরবে বলেও মনে করেন তিনি।