বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার পর এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-শান্তি কেড়ে নিচ্ছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। রান্নার জন্য ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গত ১৩ বছরে জিনিসপত্রের মূল্য গড়ে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তিন গুণ। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
পেঁয়াজের মূল্য এখন ২২০-২৩০ টাকা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে মানুষকে পেঁয়াজ খেতে নিষেধ করছে। চালের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা এবং আটার দাম ৫-১০ টাকা বেড়েছে। তাহলে সরকার কী জনগণকে ভাত খাওয়া বাদ দিতে বলবে?
ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। তাহলে কি তেল খাওয়া বাদ দিতে হবে? তিনি বলেন, জনগণ কী খাবে, কী খাবে না তা নির্ধারণ করে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়। এর অর্থ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের জনসভাগুলোতে প্রচার করেন, ‘১০ টাকা সের চাল খাওয়াব, ঘরে ঘরে চাকরি দেব।’
এখন বাজারে প্রতি কেজি চাল ৫৯-৬০ টাকা। এমনকি পেঁয়াজের পাতার কেজি এখন ১০০ টাকা। এক হিসাবে দেখা গেছে, গত এক বছরে সবকিছুর দাম বেড়েছ ৪৩৭ গুণ।
২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যের দামের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, টিসিবির দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৬ সালে মোটা চালের কেজি ছিল সাড়ে ১৭ টাকা, এখন তা বেড়ে ৩৪-৪০ টাকা। ওই সময় পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮-২০ টাকা, এখন তা বেড়ে ২২০-২৩০ টাকা।
প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৪৮-৫৫ টাকা, এখন তা বেড়ে লিটারপ্রতি ৮০-১১০ টাকা। গরুর মাংসের দাম ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৩০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজে এখন চাল, ডাল, লবণ, তেল, আদা, রসুন থেকে শুরু করে শীতকালীন সব সবজিতে সংক্রমিত হয়েছে। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার মূল্য ৮০ থেকে ১০ টাকার নিচে। আবার এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে সরকার।
এবার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় তবে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামবে বিএনপি। বিদ্যুতের দাম শুধু বিএনপিকে এফেক্ট করে না, পেঁয়াজের দাম শুধু বিএনপিকে এফেক্ট করে না, সবাইকে এফেক্ট করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্নীতির পর নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা ও উদাসীনতা দেশবাসীকে হতাশ করেছে। দ্রব্যমূল্যের বাজার অসহনীয় করার জন্য দায়ী ভোটারবিহীন সরকার। দলীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে এবং টিসিবিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বর্তমান মিডনাইট সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কারণ তাদের সরকার গঠনে জনগণের ভোটের দরকার হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
তারা নির্বাচনের খোলসে দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঘাড়ে ভর করে গায়ের জোরে পুনরায় সরকার গঠন করতে চায়। কিন্তু জনগণ তাদের এই গণবিরোধী ষড়যন্ত্র আর বরদাশত করবে না। আগামী নির্বাচনে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের উচিত শিক্ষা দেবে।
মির্জা ফখরুল ভোটারবিহীন নির্বাচন বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে পুনর্র্নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, অন্যথায় কেবল দ্রব্যমূল্যভিত্তিক সমস্যাই নয়, পুরো জাতির ভবিষ্যৎ জীবন আরও অসহনীয় ও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।