ছোট্ট শিশুটি ঘরময় ছুটোছুটি করছে। বিরামহীন এই ছুটোছুটির মধ্যে দিয়েই ওর বেড়ে ওঠার আর অনেক কিছু শেখার শুরু। আপনার সন্তানের বুদ্ধিদীপ্তভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খুবই সহায়ক। ছোট্ট মানুষটির অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানার্জনের পথ মসৃণ করতে ছয়টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. শিশুর সাথে বেশি বেশি কথা বলা
১৮ মাস থেকে দুই বছর বয়সী বেশিরভাগ শিশুর শব্দভান্ডারে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি করে শব্দ যোগ হয় এবং দুই বছর বয়সে শিশু ৫০ থেকে ১০০ টি শব্দ বলতে পারে। ব্রেইন রুলস ফর বেবীর সম্পাদক ট্রেসি কাচলোও বলেন, “শিশুর সাথে যত বেশি কথা বলা হয়, তারা তত বেশি শব্দ শিখতে সক্ষম হয়।”
এই সময়টা বই পড়ে শোনানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। নানারকম গল্প বলার সময় ভিন্ন ভিন্ন কণ্ঠ এবং অভিব্যক্তি ব্যবহার করলে শিশুর এই শিখন প্রক্রিয়া আরো আকর্ষণীয় হয়।টেলিভিশনের কার্টুনের একপাক্ষিক কথা নয়, মানুষের সাথে সামনাসামনি কথোপকথন শিশুর জন্য জরুরী। কথোপকথনের মাধ্যমে শেখা নানা শব্দ শিশুকে ভবিষ্যতে তার নিজের কথা বলা,পড়া,লেখা এবং বানান শেখার পথ তৈরি করে দেয়।
২. শিশুর সংবেদনশীল মনোভাব সৃষ্টি
সংবেদনশীলতা শিশুর সামাজিক ও জ্ঞানভিত্তিক বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরী।এই সংবেদনশীলতা এমন এক মানবিক গুণ যা গঠনে আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন।
ব্রিগহ্যাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রস ফ্লম বলেন, “ধরা যাক, আপনার সন্তান বসে বসে খেলছে। এমন সময় আরেকজন শিশু পাশ দিয়ে হাঁটার সময় ওর সাথে ধাক্কা খেলো। শিশুকে এরকম পরিবেশে বুঝতে সাহায্য করুন যে এটি দুর্ঘটনাবশত হয়েছে। ‘ওহ, এটা একটা অ্যাকসিডেন্ট’!-এরকম ছোট্ট বাক্যই আপনার শিশুকে বুঝতে সাহায্য করবে এবং মনের মাঝে কোন রাগ থাকলে তা ঝেড়ে ফেলবে।
তেমনি আপনার সন্তান যদি কারো সাথে কোন কিছু শেয়ার করে, তাহলে তাকে সেটার জন্য প্রশংসা করুন। আপনি বলতে পারেন, “দেখেছো, তুমি ওকে খেলনাটা দিয়েছো তাই ও কত খুশি হয়েছে!” এভাবে আপনার সন্তান তার কাজ আর আবেগের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে শেখে, তার ভেতর সংবেদনশীল মানসিকতা তৈরি হয়।”
৩. বুদ্ধিদীপ্ত খেলা
শিশুর আবেগ এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য খেলাধূলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ট্রেসি কাচলোও তিন থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী কিছু খেলার উদাহরণ দিয়েছেন।
এর একটা হলো বৈপরীত্য। কিছু ছবি হাতে নিন। সূর্যের ছবি দেখিয়ে বলুন রাত, কিংবা চাঁদ। দেখবেন ও নিজেই আপনাকে সঠিকটা বলে দেবে।অথবা একটা ড্রাম বা ঢোল নিয়ে সেখানে একবার আওয়াজ করুন। আর ওকে দুইবার শব্দ তুলতে উৎসাহিত করুন।
এই দুটো খেলার উদ্দেশ্য হলো শিশুকে চিন্তা করার সময় দেয়া, কখন থামতে হবে বা কী করতে হবে সে ব্যাপারে শেখানো।
আত্মনিয়ন্ত্রণ শিশুকে ভবিষ্যত জীবনে পরিকল্পনা, হিসাব, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং যেকোন কাজে লেগে থাকতে সাহায্য করে।
৪. শিশুর জন্য সৃজনশীল পরিবেশ সৃষ্টি
ডেভেলপমেন্টাল মলিকিউলার বায়োলজিস্ট জন মেডিনা বলেন, বাড়িতে শিশুর জন্য এমন পরিবেশ তৈরী করুন যেখানে সে তার কল্পনার বিকাশ ঘটাতে পারবে। আর সেজন্য অনেক খেলনারও প্রয়োজন নেই। একটি ছোট্ট খালি বাক্স আর কিছু রং পেন্সিলও হতে পারে ওর সৃজনশীল বিকাশের জন্য সহায়ক উপকরণ।কোন ছকবাঁধা খেলনা না দিয়ে শিশুকে তার নিজের মত করে ঘরের জিনিস দিয়েই সময় কাটাতে অভ্যস্ত হতে দিলেই শিশু তার কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিশীল হয়ে উঠতে পারে।
৫. শিশুর যে কোন চেষ্টার প্রশংসা করা
শিশুর বিকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশুর পিতামাতা ফলপ্রত্যাশা না করে সন্তানের চেষ্টার প্রশংসা করেন, সেসব শিশুরা তুলনামূলকভাবে অধিক পরিশ্রমী হয় এবং বড় হয়ে জীবনে উন্নতি করে।
তাই শিশুকে ‘তুমিতো খুব বুদ্ধিমান” এটা না বলে বলা উচিত “তুমি কাজটা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছো”। তার চেষ্টার দিকে নজর দিলে এবং সেটা তুলে ধরলে শিশুও ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে যেকোন কাজ পরিশ্রমের সাথে সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দিকে আগ্রহী হবে।
এভাবে বেড়ে উঠলে শিশু যেকোন ব্যর্থতা বা ভুলকে মেনে নিয়ে তা সমাধানের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়।
৬. আঙুলে নির্দেশ
গবেষণায় দেখা গেছে, যদি শিশুদের আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে কোনকিছু দেখানো হয়, তো তারা দ্রুত ভাষা রপ্ত করতে পারে। যেমন- ঐ যে দেখো এটা গাড়ি, এটা জামা এভাবে বললে তাদের শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
অধ্যাপক রস ফ্লমের মতে, যেকোন কিছু দেখিয়ে সেটার সম্পর্কে কথা বললে শিশুর সামাজিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং ভাষার উন্নয়ন হয়।
সূত্রঃ বেবি সেন্টার