আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা একটু উদ্বিগ্ন, আমরা বিচলিত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য নয়। আজকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোসররা সরকার হটানোর নিরাপদ সড়ক খুঁজছে। তারা ৯ বছরের ৯ মিনিটও রাস্তায় বিক্ষোভ করতে পারেনি। কোটা আন্দোলনে ভর করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার তাদের দোসররা সোয়ার হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনে। তার লক্ষণ ও উপসর্গ আমরা গত ৫ দিন ধরে লক্ষ করছি।
শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে আয়োজিত যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক তা সরকার স্বীকার করেছে। কিন্তু এ যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক পথে উসকানি দিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অশুভ চক্রান্ত লক্ষ করছি। আমরা এও লক্ষ করছি, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মিছিলে ঢুকে কীভাবে অশ্লীল, বিশ্রী, অশালীন স্লোগানের উসকানী দিচ্ছে একটি রাজনীতিক মতলবী মহল। তারা এই শিশুদের সমাবেশে খাবার পানি সরবরাহ করছে। উসকানী দিচ্ছে আরও উত্তেজিত হওয়ার জন্য। আমরা লক্ষ করছি এই শিক্ষার্থীরা কিছু কিছু এলাকা থেকে এই এই কুচক্রী মহলদের বের করে দিয়েছে। এই মহলটি সন্ধ্যার পর বেশি তৎপর হয়। সন্ধ্যার পর এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রী, এমপি অনেকেই নাজেহাল হয়েছেন। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা তাদের নাজেহাল করেনি। অনুপ্রবেশ করে মতলবী মহলটি অপকর্ম করেছে পুলিশ বিজিবি অফিসার ও ভদ্রলোককে অপমান অপদস্থ করেছে। সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে কার্যকলাপ শুরু করেছে। আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের অনুরোধ করেছি। কোনো প্রকার উসকানির ফাঁদে না পড়ে সে ব্যাপারে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি। শুধু তারা লক্ষ রাখবে কারা কারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে শিশুদের যৌক্তিক আন্দোলনকে জনগণের কাছে ভুল বার্তা দিতে চেষ্টা করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শিশুদের যৌক্তিক আন্দোলন যেনো কোনোভাবে অযৌক্তিক দিকে না যায় সে জন্য সবাই সচেতন থাকবো, সতর্ক থাকবো। স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে, শিক্ষকদের কাছে, অভিভাবকদের কাছে শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা চাই। আমরা আশা করি আমরা সহযোগিতা পাবো। এখানে কেউ যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবাইকে অনুরোধ জানাই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আগুনের ভয়ে, ভাংচুরের ভয়ে মারপিটের ভয়ে অনেক যানবাহন রাস্তায় নামছে না। আমি নিজেই গতকাল পর্যন্ত বিআরটিসির গাড়ি চালিয়েছিলাম। চালকরা এখন জীবনের আশঙ্কায় নিরাপত্তার ভয়ে গাড়ি চালাতে চায় না। এই আন্দোলনে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থায় কালো ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ গাড়ির অভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে সম্মান করি। তোমরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের নেতা। তোমদের কাছে অনুরোধ করতে চাই। তোমরা শান্ত হও। তোমরা দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের কাজে লাগাবে। উসকানিতে অবশ্যই তোমরা বিভ্রান্ত হবে না। আমি ছাত্র-ছাত্রীর বক্তব্য শুনেছি। তাদের মধ্যে শুভবোধ আছে। এই শুভবোধ আমাদের কাজে লাগবে। দয়া করে সহযোগিতা করুন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা প্রথম থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ধৈর্য ও সহিষ্ণতার পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করছি। ৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সরকার কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। প্রথম থেকেই এই পরিস্থস্থিতে আমরা প্রো-একটিভ ছিলাম, এখনো প্রো-একটিভ আছি। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি পাবলিক স্টেটমেন্ট করে আমরা মেনে নিয়েছি। তাদের এমন কোনো দাবি নেই যা আমরা মানতে অপরাগতা প্রকাশ করছি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঘটনার পর আশ্চর্য দ্রুততার সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে গ্রেফতার করেছে। একজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে এখন বিচারের আওতায় আছে। এই ঘটনা কীভাবে হয়েছে তা গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। তার নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো দুর্ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার করা একটি মূল বিষয় সেটা আমরা করেছি। এখানে কোনো গাফিলতি বা উদাসিনতা ছিল না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন রমিজ উদ্দিন স্কুলের পাশে একটা আন্ডার পাস নির্মাণের যে দাবি সেটা পূরণে বিষয়ে তড়িত ব্যবস্থা নিতে। অবশ্য এর আগে তিনি(প্রধানমন্ত্রী) সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এর ডিজাইন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে একটা প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য। সেনাবাহিনীর সে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই আন্ডার পাস নির্মাণের কাজ অচিরেই শুরু করতে যাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন আইনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় আগামী সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন উত্থাপন করবে এবং সেটি বিল আকারে পাস হবে। এরপরে এই সরকারের শেষ অধিবেশন সম্ভবত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এ আইনটি পাস হবে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। কোনো প্রকার ঘাটতি শৈথিল্য নেই।
শোকের মাসে কেউ যেন চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য আমাদের নেতৃবৃন্দকে পর্যবেক্ষণ করতে বলেছি। সতর্ক থাকতে বলেছি। বিলবোর্ড, পোস্টার, ব্যানারে যেন শৃঙ্খলভাবে প্রদর্শন করা হয়। আগস্ট মাসের ভাবগাম্ভীর্য যেন নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছি।