গরমে সবাই বেলের ঠান্ডা শরবত খেতে পছন্দ করেন। বেলের শরবতের প্রশংসা অনেকেই শুনেছেন। পুষ্টিবিদেরাও বেলের শরবতের প্রশংসা করেন। তবে তাঁরা বাড়িতে তৈরি বেলের শরবত খাওয়ার কথা বলেন। পুষ্টিবিদেরা বলেন, শরীরের পানিস্বল্পতা দূর করতে বেলের শরবতের তুলনা হয় না। আবার পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও এটি অনন্য।
এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত সারা দিনের ক্লান্তি মুছে শরীরকে চাঙা করে তুলতে ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে অবসাদ ঘুচিয়ে দিতেও বেশ কার্যকর।
বেল আমাদের দেশের দারুণ জনপ্রিয় একটি ফল। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার কয়েকটি দেশে বেল পাওয়া যায়। বেশি বেল পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও বেলের নানা গুণের কথা বলা হয়।
বেলের শক্ত খোলসের ভেতর থাকা নরম মজ্জা বা শাঁস সরাসরি খাওয়া যায় বা তা দিয়ে শরবত তৈরি করা যায়। বেলের শরবত খুব পুষ্টিকর। এটি নানা রোগের বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখে এবং চুল পড়া ঠেকায়। বেল পেটের নানা রোগ সারাতে জাদুর মতো কাজ করে। কাঁচা বেল ডায়রিয়া ও আমাশায় রোগের ওষুধ হিসেবেও বিবেচিত। বেলে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম।
পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম বেলে রয়েছে পানি ৫৪ দশমিক ৯৬ থেকে ৬১ দশমিক ৫ গ্রাম, প্রোটিন ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম, স্নেহ পদার্থ শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৩৯ গ্রাম, শর্করা ২৮ দশমিক ১১ থেকে ৩১ দশমিক ৮ গ্রাম, ক্যারোটিন ৫৫ মিলিগ্রাম, থায়ামিন শূন্য দশমিক ১৩ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ১ দশমিক ১৯ মিলিগ্রাম। কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে বেলের ভূমিকা অনেক। বেল পেটের নানা অসুখ সারিয়ে তোলে। বেলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা ব্রণ সারিয়ে তোলে। নিয়মিত বেল খেলে কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পেট ঠান্ডা রাখে। এ কারণে অনেকে গরমের সময় বেলের শরবত খায়। বেলের ভিটামিন এ চোখের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অঙ্গগুলো ভালো রাখে।
বেলের গুণাগুণ
* যাঁদের হজমে সমস্যা আছে, বেল তাঁদের জন্য বেশ উপকারী।
* কাঁচা বেল ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য ভালো। এ জন্য ফালি ফালি করে কেটে রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে নিতে হবে। উষ্ণ গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোগীকে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে।
* জন্ডিস, যক্ষ্মা, উচ্চ রক্তচাপের জন্যও বেল খুব উপকারী।
বাড়িতে কীভাবে বেলের শরবত তৈরি করবেন
* পাকা বেল পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
* চামচ বা ছুরি ব্যবহার করে বেলের শক্ত খোসা ছাড়িয়ে এর শাঁস আলাদা করুন।
* এতে পরিমাণমতো পানি দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন।
* এরপর পানিতে ওই শাঁস গুলিয়ে নিন, যতক্ষণ না পরিপূর্ণ পানির সঙ্গে মেশে ততক্ষণ নাড়ুন।
* বেলের বীজগুলো আলাদা করে সরিয়ে ফেলুন।
* ছেঁকে নিয়ে বেলের শরবত আলাদা করে ফেলুন।
* এতে প্রয়োজনে কিছুটা চিনি ও লেবুর রস দিয়ে গুলিয়ে নিন।
* প্রয়োজন হলে বরফের টুকরো যুক্ত করে ঠান্ডা করে নিন, এরপর পরিবেশন করুন।