বান্দরবানে স্থায়ী বাসিন্দার সনদ জালিয়াতি করে এক নারী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় সৃষ্টি করলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. অংচালু।
লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের খ(২) স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে পরিবার কল্যাণ সহকারি (এফডব্লিউএ) পদে নিয়োগ নিয়ে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই পদে আবেদনকারী বিউটি ত্রিপুরা লিখিত অভিযোগে বলেছেন তিনি খ(২) স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে এফডব্লিউএ পদে আবেদন করেছেন। একই সঙ্গে হেনা খাতুন নামে একজনও আবেদন করেন। কিন্তু হেনা খাতুন বান্দরবানের স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাঁর বাড়ি শেরপুরের নকলায়। তাঁর বাবা আব্দুল হান্নানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে আজিজনগরের ১৯৮৩ সালে পূনর্বাসিত আরেক আব্দুল হান্নানের হোল্ডিংয়ের জমি দেখিয়ে তিনি বোমাং রাজার দপ্তর থেকে স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র নিয়েছেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার প্রভাবে বহিরাগত হেনা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে বিউটি ত্রিপুরা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
নিয়োগ পাওয়া হেনা খাতুন বলেছেন, আজিজনগরের চাম্বি মৌজায় তাঁর বাবা আব্দুল হান্নানের নামে ২০ শতক জমি (হোল্ডিং-১৩৫৯) রয়েছে। মা-বাবা বসবাস না করলেও তিনি আজিজনগরে দীর্ঘদিন ধরে ফুফাত ভাই ও আজিজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামের বাড়িতে থাকেন। একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে চাকরিও করেছেন। এ জন্য স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র নিয়েছেন এবং চাকরিতে আবেদন করেছেন।
আজিজনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, তাঁর মামা আব্দুল হান্নান এখন শেরপুরে থাকলেও এক সময় আজিজনগরে ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগে তাঁর বিরোধীরা মামাতো বোন হেনা খাতুনের চাকরি হোক চায় না। এ জন্য বিউটি ত্রিপুরাকে দিয়ে অভিযোগ করানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হেনা খাতুনের সমস্ত শিক্ষাগত ও অভিজ্ঞতা সনদপত্র নকলা শেরপুরের ঠিকানায়। চাম্বি মৌজায় ১৩৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ের ২০ শতক জমির ১৯৮৩ সালের আবেদনে আব্দুল হান্নানের আবেদন অনুযায়ী তাঁর পূর্ব ঠিকানা পঞ্চগড়ের দিবপাড়া গ্রামে। আব্দুল হান্নানের পরিবারের পাঁচ সদস্যের মধ্যে হেনা খাতুন নামে কেউ নেই। হেনা খাতুন তাঁর বাবার নাম আব্দুল হান্নান ও মায়ের নাম হাসনা বেগম উল্লেখ করলেও জমির মালিক আব্দুল হান্নানের স্ত্রীর নাম সালেহা বিবি।
আজিজনগরের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, তাঁর বাবা ও আব্দুল হান্নান একই সময়ে আজিজনগরে এসেছিলেন। কিন্তু এক বছর থাকার পর ম্যালেরিয়ার ভয়ে তাঁর বাবার কাছে ২০ শতক জমি বিক্রি করে আব্দুল হান্নান পরিবারসহ আবার পঞ্চগড়ে ফিরে যান। এখন আব্দুল হান্নান ও তাঁর বাবা দুইজনই মৃত।
বান্দরবান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ২৮ জানুয়ারি ২৪ জনকে এফডব্লিউএ পদে নিয়োগ প্রদান করে। স্বাস্থ্য ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দাকেই সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে নিয়োগের শর্ত রয়েছে। যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের বাসিন্দাকে নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ আছে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অংচালু বলেছেন, তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে হেনা খাতুনের নিয়োগ বাতিল হবে। মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে।